মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে প্রেম দেব না?

ভারতের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের প্রেমকে ‘বৈষ্ণব প্রেম’ হিসেবে অভিহিত করলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের গভীর প্রেম। এটি বৈষ্ণব প্রেম, মেরেছো কলসির কানা তাই বলে প্রেম দেব না। সেই নীতিতে বাংলাদেশ সরকার আজকে ভারতের সঙ্গে একের পর এক চুক্তি করছেন, যেখানে দেশের স্বার্থ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার একগুঁয়েমি করে বাকশালী কায়দায় সুন্দরবনের অদূরে রামপালে কায়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় আমাদের করণীয়’-শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন রিজভী। সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’।

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এটা করতেই হবে। কারণ, গভীর প্রেম। এই যে প্রেম যত ধ্বংসই আসুক না কেন, সেটা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। এ প্রেম অব্যহত থাকতে হবে। এটি বৈষ্ণব প্রেম, ‘মেরেছো কলসির কানা তাই বলে প্রেম দেব না?’।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত করে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, টিপাইমুখে বাঁধ দেয়া হয়েছে; অথচ আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারব না। ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মানেই হচ্ছে দেশপ্রেমের ঘাটতি হওয়া। দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে আমরা প্রতিবাদ করবই। তবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নই।’

প্রধানমন্ত্রী যা বলেন করেন তার উল্টোটা, এটাই স্বাভাবিকতা-এমনটা উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দেখবেন, এক-এগারোতে গ্রেপ্তারের জন্য আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপিরা উস্মা প্রকাশ করেছেন। পটভূমি তৈরি করার জন্য কাউকে কাউকে দায়ী করেছেন, ইংরেজী পত্রিকার সংম্পাদককে দায়ী করেছেন। ষড়যন্ত্রই বড় হলো, যারা যুদ্ধের ময়দানে মির্জাফরের ভূমিকা পালন করল, আপনার একজন মন্ত্রী বললেন তার (জেনারেল মঈন) ভূমিকা অনেকটা আব্রাহাম লিংকনের মতো। এইটা তো বৈসাদৃশ্য।’

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল জলিল; যিনি মারা গেছেন। তিনি বলছিলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাবিনেটের অধিকাংশই ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট। এটি জলির সাহেবের কথা, আমার কথা নয়। তারা অনেকেই ওই সময় আঁতাত করে আত্মরক্ষা করেছেন। এই কারণে অনেকেই গ্রেপ্তার হননি, তারা ভাল ছিলেন। তারাই তো পরবর্তীতে মন্ত্রী হয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাই হয়, তাহলে আপনি এ সমস্ত মীরজাফরদের ক্যাবিনেটে নিলেন কী করে? আপনার জোটের শরিক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ; তিনি বলেছেন, এক-এগারোর জন্য শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন। অথচ এই এক-এগারোর জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এক বছর তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। তার দুই পুত্রকেও কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সেটার জন্য আপনি (ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম) দুঃখ প্রকাশ করেননি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যেসব মন্ত্রী ওই পত্রিকার (ডেইলি স্টার) সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন, আমরা কাছে তা মিলছে না। যেমন মিলছে না- রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি। এ ধরনের বৈপরিত্য আমরা সব সময় দেখছি।’

আয়োজক সংগঠেনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, বিডিএস এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সিএইচআরএম এর চেয়ারম্যান অ্যাডেভোকেট ড. মো. জিয়াউর রহমান, এসএসএফ এর সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট শেখ তাহসিন আলী, বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই