মেঝের রক্ত কার, জানতে ৭০ ছাত্রীকে নগ্ন!

স্কুলের শৌচাগারের মেঝে আর দেয়ালে লেগে থাকা রক্ত চোখে পড়েছিল হোস্টেলের এক ওয়ার্ডেনের।

দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এটা ঋতুস্রাবের রক্ত। কিন্তু স্কুলের কোন ছাত্রী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে? কে শৌচাগার নোংরা করেছে? তা জানতে পারেননি তিনি।

আর এটি নিশ্চিত হতে এবং সেই ছাত্রীকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে একে একে স্কুলের ৭০ জন ছাত্রীকে দাঁড় করিয়ে নগ্ন করে তল্লাশি চালান ওই ওয়ার্ডেন।

ছাত্রীদের অভিযোগ, নগ্ন করেই তাদের দীর্ঘ সময় শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়।

বৃহস্পতিবার ভারতের মুজফ্ফরনগর জেলার কস্তুরবা গাঁধী গার্লস আবাসিক স্কুলে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের জানানোর পর তারা স্কুলে এসে বিক্ষোভ করেন।

পরে চাপের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ওয়ার্ডেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার, বিবিসি বাংলার।

অবশ্য ওয়ার্ডেন সুরেখা তোমর অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।

তার ভাষ্যে, ছাত্রীদের মধ্য থেকে দু’জনকে দিয়ে অন্যদের তল্লাশি করানো হয়।

সুরেখা তোমর জানান, শৌচাগারের নালায় রক্তমাখা কাপড় আটকে থাকতে দেখে তিনি কোন কোন ছাত্রীর ঋতুস্রাব হচ্ছে, তা পরীক্ষা করাচ্ছিলেন। কিন্তু এটিকেই বড় করে দেখানো হচ্ছে।

অবশ্য স্কুলের ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করছেন, ছাত্রীদের নগ্ন করে দেহ তল্লাশি করিয়েছেন ওয়ার্ডেন।

ওই স্কুলের এক ছাত্রী গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার দিন হোস্টেলে কোনো শিক্ষিকা ছিলেন না। তখনই ওয়ার্ডেন তাকে ও আরেকজন ছাত্রীর কাছে বাথরুমে রক্তের দাগ কেন, জানতে চান।

ওই ছাত্রীর ভাষ্যে, ওয়ার্ডেন তাকেই এজন্য দোষারোপ করছিলেন। সে যতই বলছিল, সে ওই দাগ লাগায়নি, ততই ওয়ার্ডেন রেগে যাচ্ছিলেন।

শেষমেশ তিনি আদেশ দেন, এই ছাত্রীটি ও আরেকজন যেন অন্য সব ছাত্রীদের পোশাক খুলে তল্লাশি করে। না হলে মারধরের ভয় দেখিয়েছিলেন তিনি।

এই ছাত্রীটি জানায়, ছোট হওয়ার কারণে তার প্রতিবাদ করার সাহস হয়নি।

ওই ঘটনা অভিভাবকদের কানে যেতেই তারা বৃহস্পতিবার স্কুলে এসে বিক্ষোভ করেন। স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ যায়। ওইদিনই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

শুক্রবার সেই কমিটি রিপোর্ট দাখিল করে ওয়ার্ডেন সুরেখা তোমরকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্রকেশ যাদব বলেছেন, ওই হোস্টেলের সব কর্মীই নারী। শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডেন সবাই।

তিনি বলেন, ‘একজন নারী হয়ে তার তো নৈতিক দায়িত্ব ছিল নিজের সন্তানের থেকেও বেশি করে এই বাচ্চাগুলোর প্রতি নজর দেয়া। কিন্তু তা না করে এই জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।’

চন্দ্রকেশ যাদব বলেন, ‘আমরা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছি। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এটির আদ্যপান্ত তদন্ত করবেন। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

তবে সুরেখা তোমর জানান, একটা বড় চক্রান্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এতে অন্য শিক্ষিকারা যেমন জড়িত, তেমনই ছাত্রীরাও।

তিনি জানান, কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্যে ছাত্রীদের রাখতে চান তিনি। তাই তারা তাকে পছন্দ করে না। আর তিনি নিজে তল্লাশি করেননি, যা করেছে অন্য বাচ্চারাই করেছে।

সুরেখা তোমর আরও বলেন, ‘যদি দেহ পরীক্ষা করা হয়েই থাকে, সেটা এমন কোনো বড় ব্যাপার না।’



মন্তব্য চালু নেই