মুসলিম বিশ্বের সংকট নিরসনে ওআইসিকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সকে (ওআইসি) সন্ত্রাস দমনে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে মুসলিম বিশ্বের বিবাদপূর্ণ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে সংকট নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওআইসি মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ আহবান জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম বিশ্বের বিবাদপূর্ণ দলগুলোর সংকট নিরসনে ওআইসি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে।’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিবদমান বিভিন্ন সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করেন।

মানবাধিকারের বিষয়টি তাদের আলোচনায় উঠে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইল নিরীহ নিরাপরাধ নারী-শিশু হত্যা করলেও অতীতে দেখা গেছে কোনো মানবাধিকার সংস্থাই এ নিয়ে কথা বলেনি।

ওআইসি মহাসচিবের বাংলাদেশে আগমনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমগ্র বিশ্বের জন্যই একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ তা যে রূপেই আসুক না কেন তার বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ঘোষণা করেছি।

তার নিজের পরিবারও সন্ত্রাসবাদের শিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা (সন্ত্রাসীরা) ইসলামের নামে সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে প্রকৃতপক্ষে ইসলামেরই বদনাম করছে।

তিনি বলেন, ‘এরা মানুষ হত্যার নামে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যদিও কোরআনে বলা আছে আল্লাহপাকই একমাত্র বিচারক।’

আগে দরিদ্র পরিবার এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের সন্ত্রাসে জড়ানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেলেও আজকাল বেশ অবস্থাপন্ন ঘরের উচ্চশিক্ষিত তরুণ-যুবকেরাও এপথে ঝুঁকছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেসময় সন্ত্রাস মোকাবেলায় মাদানি বাংলাদেশসহ ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।

বর্তমানে বিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা এবং সাইবার অপরাধ বেড়ে যাবার প্রেক্ষিতে ওআইসি মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে ওআইসি সব সময়ই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সালের পর থেকেই বিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা এবং সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে যদিও আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাই।

সেসময় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ডে কার্যকর ভূমিকা পালনের বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।

মাদানি সন্ত্রাসের শেকড় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের এই ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে ওআইসি মহাসচিব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে তাদের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কেও আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সেসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ওআইসি’র রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপিয় ইউনিয়নে স্থায়ী ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমত জাহান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।



মন্তব্য চালু নেই