মুসলিম নারীদের পোশাকের নিচে অন্তর্বাস পরিধান করা কি জায়েজ?

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা রয়েছে। এ নিবন্ধে পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতে চাই। এ সম্পর্কে সমাজে যেসব ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতা লক্ষ করা যায় তার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

হ্যাঁ মুসলিম নারীদের পোশাকের নিচে অন্তর্বাস পরিধান করতে পারবেন তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে এসব পোশাক পরিধান করা উদ্দেশ্য যেন ইসলাম পরিপন্থী কোনো কাজ না হয়। কল্যান ও ভালোর নিয়তে এসব পোশাক পরিধান করা জায়েজ। তবে ইসলাম পোশাক পরিধান করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নীতিমালা প্রদান করেছেন। এসব নীতিমালাগুলো প্রতি লক্ষ রাখাতে হবে।

পোশাক সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা :

এই জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে। প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।

১. সতর আবৃত করা :
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সূরা আ’রাফ ২৬)

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা যেন শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়। তা নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। মহিলাদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

২. অধিক পাতলা বা আঁটশাট না হওয়া :
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম।

৩. বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া :
বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েয। যেমন ইহুদী-খৃষ্টান পুরোহিতদের পোশাক। হিন্দুদের ধুতি-লেংটি, মাজার পূজারীদের লালশালু এবং শিয়াদের অনুকরণে পূর্ণ কালো পোশাক ইত্যাদি। হাদীস শরীফে এসেছে,‘নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না।’ (সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তাদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তবারানী আওসাত ৩৯২১; ফাতহুল বারী ১০/২৮৪)

৪. অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া :
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যেগুলোকে শরীয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছে এবং তা পরিধান করতে নিষেধ করেছে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় ব্যবহার করা। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর মহিলাদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। (জামে তিরমিযী ১/৩০২ হাদীস ২৭৯) তদ্রূপ টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা।

হযরত আবু জুরাই থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে ভালবাসেন না। (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদীস ২৪১৯)

৫. প্রসিদ্ধির পোশাক না হওয়া :
মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যে পোশাক নির্বাচন করা, পোশাকের ভিন্নতা ও চাকচিক্য এজন্য বেছে নেওয়া যেন লোকসমাজে সে প্রসিদ্ধি পায়। এককথায় মানুষের নিকট আলোচিত ও প্রসিদ্ধ হওয়ার নিয়তে পোশাক গ্রহণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯; আততারগীব ৩/১১২)



মন্তব্য চালু নেই