মুসলিম উম্মাহর জন্য মিরাজের বিশেষত্ব

মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ : মিরাজ মানে ঊর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণ। আর এ মিরাজ দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছানোর ঘটনাকেই উদ্দেশ্য। যার ব্যবস্থাপক হলে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। বিশ্বনবির মিরাজের সফরের সঠিক তারিখ ও বৎসর নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে বহুল প্রচলিত অভিমত হলো মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের আগে বিশ্বনবির মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ের ২৬ রজব দিবাগত রাতে। এ উর্ধ্বলোকে ভ্রমণ ছিল বিশ্বনবির স্বশরীরে এবং জাগ্রত অবস্থায়। মিরাজের বিষয়ে কুরআনুল কারিমের সুরা বনি ইসরাইল এবং সুরা নজমে আলোচিত হয়েছে।

মক্কার মসজিদুল হারাম (বায়তুল্লাহ) থেকে শুরু করে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদে আকসা হয়ে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন শেষে সিদরতে মুনতাহা অতিক্রম করে জিব্রিল আলাইহিস সালামের বিদায়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাকি আল্লাহ তাআলার অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে রহওয়ানা হন। সেখানে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। এটা হলো মিরাজের সংক্ষিপ্ত রূপ।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজে আমাদের জন্য কি বিশেষত্ব বা দিক-নির্দেশনা রয়েছে তা জানা একান্ত প্রয়োজন। যার বিস্তারিত বিবরণে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত লাভের পর মিরাজের রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য নির্ধারিত হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দান করেছিলেন। যা নিয়ে বিশ্বনবি খুশিমনে চলে আসছিলেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এ কথা জেনে বিশ্বনবিকে বললেন, আপনার উম্মাত দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে সক্ষম হবে না। ফলে বিশ্বনবি তাঁর উম্মাতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত থেকে ধাপে ধাপে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ উপহারস্বরূপ নিয়ে আসলেন। যারা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তাদেরকে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমপরিমাণ ছাওয়াব প্রদান করা হবে।

>> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, বিশ্বনবি উম্মতের জন্য মিরজের রজনীতে তিনটি উপহার নিয়ে আসেন। ১. পাঁচওয়াক্ত নামাজ; ২. সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত; ৩. আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করলে তিনি বান্দার অন্যান্য গোনাহ মাফ করে দিতে পারেন- এই ঘোষণা।

>> উপরোক্ত তিনটি উপহারের সঙ্গে আরো একটি ঘোষণার কথা হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো সৎকর্ম করার মনস্থ করবে, তা বাস্তবায়ন করার আগেই তার জন্য একটি সওয়াব লিখে দেওয়া হবে। আর সে সংকল্প বাস্তবায়ন করলে দেওয়া হবে দশ গুণ সওয়াব। আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করার মনস্থ করবে, যতক্ষণ সে কাজটি না করবে ততক্ষণ তার জন্য কোনো গোনাহ লেখা হবে না। যদি সে কাজটি করে বসে, তবে তার জন্য একটি গোনাহ লেখা হবে।

যেহেতু মিরাজের শ্রেষ্ঠ উপহার নামাজ তাই আল্লাহ তাআলা বান্দার সঙ্গে নামাজের মধ্যে সুরা ফাতিহা দ্বারা কথোপকথন করেন। নামাজই আল্লাহর নৈটক্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। যা আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য দৈনিক পাঁচ বার ফরজ করেছেন। এ জন্য কিয়ামাতরে দনি সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসবা গ্রহণ করা হবে।

মানুষের জন্য দ্বিতীয় উপহার সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত যার প্রথম আয়াতে পূর্ববর্তী নবি-রাসুল এবং আসমানি কিতাব ও ফিরিশতাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে ঈমানকে মজবুত করে দ্বিতীয় আয়াত মতে ঈমানের ওপর অটল থাকার জন্য আল্লাহ সাহায্য লাভের পন্থা শিখিয়েছেন।

মানুষের তৃতীয় উপহার হলো কর্ম সম্পাদনে মানুষ সবসময় ভালো নিয়ত করবে। শুধুমাত্র চিন্তা-চেতনার ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য ছাওয়াব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যাতে করে বান্দা সব সময় সৎকর্ম সম্পাদনে অগ্রগামী হয়।

মিরাজের রজনীতে যে নিয়ামাত বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে বান্দার জন্য দান করেছেন। তা আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই