মুসলমানদের আতঙ্কে রেখেই মিয়ানমারে নির্বাচন

রোববার মিয়ানমারে নির্বাচন। সেই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। কেন না দীর্ঘ সামরিক শাসনের নিগড় থেকে বেরিয়ে মিয়ানমার স্বাদ পেতে যাচ্ছে গণতন্ত্রের। এখন কথা হচ্ছে সে দেশের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি কি এ নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন? বিশ্লেষকরা বলছেন তার জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে মিয়ানমারের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা কি তাতে বাড়বে?

ডয়চে ভেলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে মিয়ানমারে আবার গণতান্ত্রিক শাসনের দ্বারোন্মোচন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি নির্বাচিত হতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমেও আসছে এমন বিশ্লেষণাত্মক খবর।

নির্বাচনের নানা খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরে মিয়ানমারের বাইরের পাঠকদের কৌতূহলও মেটাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে মিয়ানমারের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম রোহিঙ্গাদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের চেয়ে আতঙ্কই বেশি বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারণ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন কমবে এমন ভরসা তারা পাচ্ছেন না। এমনকি স্বয়ং সু চিও এমন ভরসা দিচ্ছেন না।

যদিও বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চি অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণায় বলছেন, প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও নির্বাচিত হলে তিনি তার চেয়ে বেশি কিছু হবেন। অর্থাৎ মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর হবেন তিনিই।

মিয়ানমারের নিপীড়িত ও বঞ্চিত সংখ্যালঘু মুসলমানদের পক্ষে সুচি অথবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতারা বলছেন, মিয়ানমারে এখনো গণতন্ত্রের দ্বার উন্মুক্ত হয়নি। ফলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পক্ষে কথা বলে সামরিক শাসকদের রোষাণলে পড়তে চাচ্ছেন না গণতন্ত্রীরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনোভাবেই বৌদ্ধদের বিরাগভাজন হতে চাচ্ছে না সুচি বা তার দল এনএলডি। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এনএলডির মনোনয়ন চেয়েছিল দুই শতাধিক মুসলিম নেতা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট ও কট্টর বৌদ্ধদের ভয়ে এনএলডির কোনো মুসলিম নেতাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তারপরও বিশ্লষকরা মনে করছেন এত বঞ্চনার পরও মিয়ানমারের মুসলিম বা আরকানের রোহিঙ্গাদের ভরসাস্থল অং সান সুচিই। তাই তার দল এনএলডি মুসলমানদের অকুণ্ঠ সমর্থন পাবে।

প্রসঙ্গত ৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ মিয়ানমারে ১০ শতাংশ মানুষই মুসলমান।

এদিকে ৮ নভেম্বরের আগেও মিয়ানমারে অনেক সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ও মানবাধিকারকর্মী কারাগারে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের মুক্তি দাবি করছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকার অনড়। তাই দেশটিকে মত প্রকাশের জন্য নিরাপদ মনে করা এখন প্রায় অলীক কল্পনা। অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমারে শুধু কারাগার বা কবরস্থানেই শুধু খোলামনে কথা বলা যায়।



মন্তব্য চালু নেই