মুন্সীগঞ্জে কারা হেফাজতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

মুন্সিগঞ্জে কারা হেফাজতে আসিফ হাসান (২১) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা মারা গেছেন। রোববার সকালে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আসিফ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

স্থানীয় কয়েকজন নেতা ও পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের নির্যাতনে ও পুলিশের অবহেলায় আসিফের মৃত্যু হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোলা ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিয়াকত মীর নির্বাচিত হন। লিয়াকতের পক্ষের কর্মী ছিলেন আসিফ। অন্যদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর পক্ষে কর্মী ছিলেন একই ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়ামিন হোসেন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় নির্বাচনের আগে নাসিরকে আওয়ামী লীগ থেকে ও ইয়ামিনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে আসিফের সঙ্গে ইয়ামিনসহ পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসিরের সমর্থকদের শত্রুতা সৃষ্টি হয়।

নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, ১২ এপ্রিল নাসিরের সমর্থক ইয়ামিনসহ কয়েকজন আসিফকে ধরে নিয়ে একটি বাড়িতে আটকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে উল্টো হামলার অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ আহত অবস্থায় আসিফকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। কিন্তু চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে ১৩ এপ্রিল মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সকালে কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান।

মুন্সিগঞ্জ কারাগারের জেলার ফরিদুর রহমান বলেন, কারাগারে আনার পর আসিফের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভোর ৫টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কারাগারে চিকিৎসক আনা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। পরে মরদেহ মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অসুস্থতার খবর পেয়ে কারা অভ্যন্তরে গিয়ে দেখি, আসিফ অচেতন। সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিয়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের সময়ই তিনি মারা যান।

চিকিৎসক সাখাওয়াত বলেন, নির্যাতনে আসিফের মৃত্যু হতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আসিফের বাবা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী নাসিরের ক্ষোভের জেরে আসিফকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আর পুলিশ তার ভালোমতো চিকিৎসা না করিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আর এতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকেরা আসিফের মাথায় ‘সিটি স্ক্যান’ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ পরবর্তী কোনো চিকিৎসা না করিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়।

সিরাজদিখান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, আসিফকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার সিটি স্ক্যান না করা ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না করিয়ে আদালতে হাজির করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি ইয়ারদৌস সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি আসিফ অপর ছাত্রলীগ নেতা ইয়ামিনের ওপর হামলা করেছেন। তাই গ্রামবাসী তাকে ধরে পিটুনি দেন। পরে ইয়ামিনের মা আলেয়া বেগম বাদী হয়ে আসিফকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। এখন আসিফের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ কোনো অভিযোগ দিলে সেটা গ্রহণ করা হবে।

চেষ্টা করেও অভিযোগের বিষয়ে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা ইয়ামিন বা তার পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে যোগাযোগ করা হলে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী নাসিরের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, আসিফের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিকেল ৪টার দিকে সিরাজদিখান শহরে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আসিফকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন বক্তারা।



মন্তব্য চালু নেই