মুজাহিদ-সাকার পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতেই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে। কিন্তু রায় কার্যকরে যে ধাপগুলো রয়ে গেছে, তা পার হওয়া যাচ্ছে না রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না পাওয়ায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দেয়ার পর সে রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগও। তবে তিন মাস আগে দেয়া এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির অপেক্ষায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ। মুজাহিদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায় পর্যালোচনার আবেদন করবেন তারা।

মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় কবে প্রকাশ হবে? দুই- তিন সপ্তাহের মধ্যে রায় পাওয়ার আশা করছি, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের এমন বক্তব্যের পর পেরিয়ে গেছে এক মাসেরও বেশি সময়। তাহলে কবে পাওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি পুরোপুরি বিচারকদের ওপর নির্ভর করছে। আমরা আশা করেছিলাম অল্প সময়ের মধ্যে পাবো। কিন্তু সেটা এখনও হয়নি। তবে আমরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি শিগগির তা পাবো’।

রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রায় পূনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন মুজাহিদ। আর তা গৃহীত না হলে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন এই জামায়াত নেতা। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকচ করলে ফাঁসি কার্যকর সময়ের ব্যাপার।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুরিন আফরোজ বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় যতো তাড়াতাড়ি প্রকাশ হবে এর কার্যক্রমও ততো দ্রুত শেষ হবে। তবে এটি নির্ভর করছে বিচারকদের উপর।’

মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মুনির বলেন, ‘আমরা এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় আছি। এরপর রিভিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত দুই জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।

এদর মধ্যে কামারুজ্জামানের আপিলের রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রায় কার্যকর করতে পাঁচ মাসের বেশি সময় লেগেছিল। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বদর কমান্ডার মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেয়। এই আদেশের পর ১৩ এপ্রিল কার্যকর হয় বদর কমান্ডারের সাজা। আপিল বিভাগের রায়ের পর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরে সময় লেগেছে প্রায় চারমাস।

মানবতাবিরোধী অপরাধে গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা ৬৭ বছর বয়সী মুজাহিদই প্রথম ব্যক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত রায়েও যিনি সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হলেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের এ সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের জনগণকে দমাতে গঠিত আলবদর বাহিনীর মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি রায়ে প্রমাণিত হলো।

৪৩ বছর আগে স্বাধীনতার উষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও স্বাধীনতাকামীদের গণহত্যা-বিভিন্ন নির্যাতনের দায়ে সে সময় আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ফাঁসির আদেশ দেয়।

আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদের আপিল খারিজ করে তার বিরুদ্ধে আনীত ৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। এ অভিযোগে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় প্রমাণিত হলো।

সাকার পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আপিলের চূড়ান্ত রায় হয়েছে ২৯ জুলাই। এই রায়েও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে।

প্রায় দুইমাস পার হতে চলেছে আপিল রায়ের। কিন্তু এখনও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। ফলে রায় কার্যকরে বাকি আনুষ্ঠানিকতায় যেতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি বিচারপতিদের ওপর নির্ভর করছে’। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই