মুখের রক্তই তাতিয়ে দিয়েছিল মেসিকে!

ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে এল ক্ল্যাসিকোর অর্থটাই যেন ভিন্ন। যেখানে থাকবে টান টান উত্তেজনা, মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ বদলে যাওয়া, আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ, গোলের পর পরিশোধ আবার এগিয়ে যাওয়া। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা মুখোমুখি হলে সারা বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী এই উদ্দেশ্যেই টিভির সামনে বসে যায়। দেখতে চায় সত্যিকারের একটি মহারণ।

রোববার রাতের এল ক্ল্যাসিকো আক্ষরিক অর্থেই উপভোগ করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনা সমর্থক আলাদা করে নয়, দর্শকদের দুর্দান্ত একটি ম্যাচই উপহার দিয়েছে মেসি-রোনালদোরা। তবে এমন একটি ম্যাচ কিন্তু জমে উঠেছে রক্ত ঝরার বিনিময়ে।

লিওনেল মেসির মুখ থেকে রক্ত ঝরার বিনিময়েই বদলে গিয়েছিল পুরো ম্যাচের চেহারা। বদলে গিয়েছিলেন মেসি নিজে। মুখের রক্তই যেন তাতিয়ে দিয়েছিল তাকে। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে সেই মেসির জোড়া গোল, বিশেষ করে একেবারে শেষ বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে মেসির দুর্দান্ত গোলই ম্যাচের সব রস, স্বাদ নিংড়ে দিয়েছিল। গোলের ব্যবধানে হয়তো বার্সেলোনা জিতেছে, তবে আক্ষরিক অর্থেই এই ম্যাচে জিতেছে ফুটবল।

২১ মিনিটের খেলা চলছিল তখন। তার আগে রিয়াল মাদ্রিদের মুহুর্মুহু আক্রমণ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, বেনজেমা আর বেল যেভাবে বার্সার রক্ষণে হানা দিতে শুরু করেছিলেন, তাতে কাতালান ক্লাবটির সমর্থকরা প্রমাদ গুনতে শুরু করে দিয়েছিল। এ সময় মেসিকেও বলের আশপাশে খুব একটা দেখা যায়নি। বরং রিয়ালের আক্রমণ ঠেকাতে দেখা গেছে অনে নিচে নেমে আসতে।

২১ মিনিটে ভুলটা নিজের অজান্তেই করে ফেললেন যেন ব্রাজিলিয়ান লেফট ব্যাক মার্সেলো। মেসির সঙ্গে একটি বলের দখল নিতে গিয়ে কনুইয়ের গুঁতো মারলেন মেসির মুখে। সঙ্গে সঙ্গেই ঠোঁট ফেটে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এলো। মেসির মুখভর্তি হয়ে গেল রক্তে। মেসি শুয়ে পড়ে সেই রক্ত থামানোর চেষ্টা করলেন। পরে চিকিৎসক এসে শুশ্রূষা করার পরই বন্ধ হলো সেই রক্ত।

তবুও মেসি যখন উঠে দাঁড়ালেন, তখন দেখা গেল তার মুখে টিস্যু পেপার। রক্ত বন্ধ রাখার জন্যই মুখে টিস্যু পেপার নিয়ে খেলে গেলেন। রক্তাক্ত মুখ নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর পরই যেন নতুন জীবন পেলেন মেসি, নতুন জীবন পেল বার্সেলোনা।

যদিও এর চার মিনিট পর কাসেমিরোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক রিয়াল মাদ্রিদ; কিন্তু আহত বাঘের মতো গর্জে ওঠা মেসি বেশিক্ষণ সেই গোলের লিড ধরে রাখতে দিলেন না রিয়ালকে। ৫ মিনিট পরই দুর্দান্ত এক গোলে সমতায় ফেরালেন বার্সেলোনাকে। পরের সময়টা শুধুই ইতিহাস।

একদিকে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর একের পর এক গোল মিসের মহড়া, অন্যদিকে মেসির দুর্দান্ত খেলা- মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই শুধু উপভোগ করেছেন। আহত মুখ নিয়ে এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন আর্জেন্টাইন তারকা, সেটা কে ভাবতে পেরেছিল? জানলে হয়তো মার্সেলো ভুলেও কোনো আঘাত লাগে এমন খেলা খেলতেন না!

ট্যুইটারে বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনা ভক্তদেরও বলতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত হওয়ার পরই মেসি গর্জে উঠেছেন। ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। রজার রজার নামে একজন লিখেছেন, ‘মেসির মুখ থেকে রক্ত ঝরিয়েছ! মেসি তোমাদেরই নিচে নামিয়ে দিয়েছে।’

রিচার্ড রোনিন নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘যখন মেসি তার মুখে রক্ত দেখতে পেলেন, তখনই মূলত গোলের দেখা পেলেন তিনি, #গোলাজো #এল ক্ল্যাসিকো।’ লরেন্স জিবি নামে একজন লিখেছেন, ‘মুখ থেকে রক্ত পড়ার পরও মেসি এতটা দুর্দান্ত!’



মন্তব্য চালু নেই