মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩ থেকে ৫ লাখ!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখ উল্লেখ করে আল-জাজিরায় প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়ে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন স্টেশনের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শীর্ষ একজন গবেষক। এই তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে টেলিভিশন স্টেশনটি প্রকৃত অর্থে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
সোমবার যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের খবরে একাত্তরে নিহত নিয়ে বিতর্কিত এই সংখ্যার পাশাপাশি একটি ফুটেজ প্রচার করে আল-জাজিরা, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র নয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই গবেষক।
‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়।” (হিস্টোরিয়ানস এস্টিমেইট থ্রি হান্ড্রেড থাউজেন্ড টু ফাইভ হান্ড্রেড থাউজেন্ড ওয়্যার কিল্ড ইন নাইন মান্থস বাই পাকিস্তানি মিলিটারি অ্যান্ড লোকাল কোলাবোরেটরস।)
রিপোর্টার যখন এই তথ্য দিচ্ছিলেন তখন ফুটেজে দেখানো হচ্ছিল, কিছু মানুষ একদিকে ছুটছে। সেখানে পুরুষরা সব প্যান্ট-শার্ট আর নারীরা স্কার্ট, টপস পরা। ছবির মানুষেরা শ্বেতাঙ্গ।
যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্দোলনের শীর্ষ নেতা, গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির বলেন, “ওই রিপোর্টে প্রচারিত ফুটেজ কোনোভাবেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ফুটেজ নয়। এই ফুটেজ কোনোভাবেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিনিধিত্ব করে না।” তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ের পর আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনে দুটি বিষয় ‘স্পষ্ট অপরাধ’।
তাদের প্রতিবেদন বলছে, “৩ থেকে ৫ লাখ লোক মারা গেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। যে কোনো দেশি বা বিদেশি গণমাধ্যম যখন এরকম সেনসেটিভ বিষয়ে তথ্য দেবে, তখন অবশ্যই সরকারি হিসাব অনুসরণ করা উচিৎ।
“সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০ লাখ শহীদ। এই পরিসংখ্যানকে পাশ কাটিয়ে তারা যে তথ্য ব্যবহার করেছে, তার সোর্স কী? এই ধরনের তথ্য তো গণহত্যার সহযোগীদের সার্ভ করে।”
মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ দুষ্প্রাপ্য নয় জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “তারা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের ফুটেজ বলে যে ফুটেজ চালিয়েছে, তা অবশ্যই বাংলাদেশের নয়। এবং এটাও গুরুতর অপরাধ।
“এই আল-জাজিরা একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে একটা অসাধারণ তথ্যচিত্র বানিয়েছে ২০০৮ সালে। কিন্তু ২০০৯ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর জামায়াতে ইসলামী যে ধরনের অভিযোগ তুলছে, তারা সরাসরি সেইসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের প্রতিবেদন, অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। তারা জামায়াতের মুখপত্র হিসাবে কাজ করছে।”
এজন্য আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তথ্য বিকৃতির জন্য আমাদের আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলব আমি।”
চূড়ান্ত রায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার দিন, ৩ নভেম্বর প্রচারিত রিপোর্টটি করেন আল-জাজিরার ঢাকা প্রতিনিধি মাহের সাত্তার।
ইমেইলে তার কাছে মুক্তিযুদ্ধে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার তথ্যের উৎস জানতে চাইলে তিনি একটি ব্লগের লিংক দেন। ‘বাংলাদেশওয়ারক্রাইমস ডট ব্লগস্পট ডটকম’ নামের ওই ব্লগ চালান বিতর্কিত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয়ে ব্লগে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করায় যার বিচার চলছে।
ডেভিড বার্গম্যান সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেনের স্বামী। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে লেখালেখির জন্য বিচারপ্রার্থী আন্দোলনের কর্মীদের কাছেও সমালোচিত তিনি।
ফুটেজ সম্পর্কে মেহের সাত্তার বলেন, এটা আর্কাইভ ফুটেজ।
আল-জাজিরার পাবলিক রিলেশন্স জানিয়েছে, এটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরই ফুটেজ।
তবে ভিডিও ফুটেজটি কোন এলাকার, কবেকার-এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে গত বছর ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।



মন্তব্য চালু নেই