মুক্তিযুদ্ধের বদলে যাওয়া ইতিহাস, কেমন ছিল পত্রিকার পাতায়?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিজয় দিবসে পত্রিকাগুলোতে ধীরে-ধীরে বিজয়গাঁথা কম জায়গা পেতে শুরু করে। গবেষকদের অভিমত, মানুষের মন থেকে ধীরে-ধীরে বিজয়ের স্মৃতি মুছে ফেলতেই এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পত্রিকাগুলো। অবশ্য সামরিক শাসনের মধ্যে কি ছাপা যাবে কিংবা যাবে না, সেই চাপও ছিল ষোলো আনা। ১৯৭৭ সালের পত্রিকায় বিজয় দিবস চাপা পড়ে যায় আট কলামের নয়া রাজনৈতিক ফ্রন্টের খবরে। ঠিক পরের বছর ১৬ ডিসেম্বরের পত্রিকায় ‘আজ বিজয় দিবস’ সংবাদটি পত্রিকার নিচের অংশে প্রকাশিত হতে দেখা যায়।

১৯৭৫ সালের আগস্টের পর সবকিছু থেকেই যেন হারিয়ে যেতে থাকেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরের বছরগুলোয় বাংলাদেশের ইতিহাস বদলে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এমনকি পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর কোনও ছবিও ছাপা হতো না তখন। ছিল না রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে কোনও নিবন্ধ। বিজয় দিবসের খবরও নেমে যায় পত্রিকার ‘লোয়ার ফোল্ডে’। পত্রিকার কোথাও পাওয়া যায় না অবিসংবাদিত চার নেতার কোনও চিহ্ন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের সদস্য ওমর শেহাব বলেন, ‘এখন সেই সময়কার সব পত্রিকার তালিকা করতে হবে। সেসব পত্রিকার যেসব সম্পাদক এখনও বেঁচে আছেন, তাদের নাম প্রকাশ করে তাদের কাছে ইতিহাসটা জানতে হবে। কিভাবে তাদের কন্ঠরোধ করা হতো, নাকি সেল্ফ সেন্সরশিপের বিষয় ছিল সেই ব্যাখ্যাও চাওয়া দরকার। জানা দরকার কেন তারা সেসময় রুখে দাঁড়াতে পারেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পত্রিকার পাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির বহুদলীয় রাজনীতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি কতটা আজগুবি।’

১৯৮২ সালের ইংরেজি-বাংলা পত্রিকাগুলো দেখলেও বোঝা যায়, বিজয় দিবস তখন গণমানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে সামরিক কায়দায় পালনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন বলেন, ‘কিভাবে সব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল ইতিহাস তার সাক্ষী। গণমাধ্যমগুলো একেবারেই স্বাধীন ছিল না। তাদের কনটেন্ট তাদের মতো করে দেওয়ার সুযোগ ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন একে একে স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে থাকলো, তখন কেবল বঙ্গবন্ধু বা চার নেতার অস্তিত্ব বিলীনের অপচেষ্টাই হয়নি, সঠিক ইতিহাস যেন না জানা যায় সে ষড়যন্ত্রও বহাল ছিল।’

পত্রিকার জন্য কৃতজ্ঞতা: সিজিবিআর ও আইসিএসএফ। -বাংলা ট্রিবিউন।



মন্তব্য চালু নেই