মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায় কার্যতালিকার এক নম্বরে

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর রিভিউয়ের রায় ঘোষণার জন্য সুপ্রিম কোর্টের তালিকার প্রথমে রয়েছে। সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা (৩০ আগস্ট) মঙ্গলবারের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে রায়টি।

মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে কার্যতালিকার শীর্ষে রয়েছে মামলাটি। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসোইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।

এর আগে আপিল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মীর কাসেমের করা আবেদনের ওপর ২৮ আগস্ট রোববার রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের শুনানি শেষ করা হয়। শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রিভিউয়ের রায়ের দিন ঠিক করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আসামিপক্ষে রিভিউ শুনানিতে অংশ নেন মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন, এসএম শাহজাহান এবং তানভীর আল আমীন। খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড পুনর্বিবেচনা চান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানান।

মীর কাসেম আলীর মামলাটি গত ২৫ জুলাই রিভিউ শুনানির জন্য ছিল। ওই দিন মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দুই মাস সময় আবেদন করেন। পরে আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করে ২৪ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। ২৪ আগস্ট নির্ধারিতি দিনে আবারো সময় চায় আসামীর আইনজীবী। সময় আবেদন খারিজ করে শুনানির নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী ওই দিন রিভিউ শুনানি শুরু করে ২৮ আগস্ট পযন্ত মুলতবি করেন। ২৮ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩০ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।

এর আগে গত ১৯ জুন মীর কাসেম আলী আপিলে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। ৮৬ পৃষ্ঠার আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি। ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করতে ২১ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ জুলাই দিন ধার্য করে তা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে তার মালিকানাধীন দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় জামায়াতের এই ব্যবসায়ী নেতাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাসেম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপিল করেন। গত ৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। তবে ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আপিল নাকচ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ই বহাল রেখেছেন আপিলি বিভাগ।

এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে এই জামায়াত নেতা মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগ সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ৬ জুন এই আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা মীর কাসেম আলীকে পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ।

আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ ছিল মীর কাসেমের সামনে। সেই অনুযায়ী ১৯ জুন তিনি রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউতে তার আবেদন খারিজ হলে আর কোনো আইনি প্রতিকার তার থাকবে না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন গৃহীত না হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করবে।

মীর কাসেম আলী ষষ্ঠ ব্যক্তি যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিলেও চূড়ান্তভাবে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একই ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই