মিষ্টিমুখের শিশু দেখে আমরা আদর করি কেন?

‘উলি উলি বাবা…।’ পরিচিত কারো কোলে ফুটফুটে শিশুর চোখে চোখ রেখে অনেকেই এভাবে সম্বোধন করে এগিয়ে যান। এর পর শিশুর গালে হালকা করে চিমটি কেটে বলেন, ‘কী কিউট বেবি’।

কেউ কেউ তো শান্ত শিশুটির নাক টিপে তাকে চনমনে করে তোলেন; এরপর কোলে নেওয়ার জন্য দুই হাত বাড়ান। শুধু কিউট বেবি নয়, কিউট বিড়ালছানা বা অন্য কোনো প্রাণী দেখলেও এই ধরনের খামচি কাটার অভ্যাস রয়েছে অনেকের।

কিন্তু কেন আমরা সুন্দর, আকর্ষণীয়, কিউট কোনো শিশু, কোনো প্রাণী দেখলে তাকে চিমটি কাটি? এই আদরমাখা খামচি দেওয়ার প্রবণতা কেন থাকে আমাদের মধ্যে?

এ নিয়ে গবেষণা করেছেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ওরিয়ানা অ্যার‌্যাগন এবং তার দল। ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই পোস্টডক্টরাল অ্যাসোসিয়েট বলেছেন, কিউট বেবি দেখে যারা খুব খুশি হন, আনন্দময়ী আচরণ করেন, এমনকি তারাও ‘প্রচ- আক্রমণাত্মক অভিব্যক্তি প্রকাশ করার’ প্রবণতা ধারণ করেন। আক্রমণাত্মক আচরণ বলতে উদাহরণ হিসেবে অ্যারাগন বলছেন, গালে চিমটি কাটা কিংবা নাক টিপ্পনি কাটা।

এই গবেষণা নিয়ে অ্যারাগন একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সে।

খামচি কাটা নিয়ে সম্প্রতি আরেকটা গবেষণা হয়েছে। কিছু মানুষের ওপর একটা পরীক্ষা চালানো হয়। আপেল বা এ রকম ফল যে বুদবুদে আবরণ দিয়ে মোড়ানো থাকে, সেই বাবল র‌্যাপ দেওয়া হয় তাদের হাতে। এরপর তাদের সামনে কিছু কিউট প্রাণীছানা এবং কিছু বয়স্ক প্রাণীর ছবি তুলে ধরা হয়। দেখা গেল, যারা বয়স্ক প্রাণীর ছবি দেখেছে তারা যতটা না বাবল র‌্যাপ মোচড়াচ্ছেন তার চেয়ে বেশি চাপাচাপি করছেন যারা কিউট ছানার ছবি দেখছেন।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ছবি দেখার সময় কোনো কিছু চেপে ধরার সুযোগ পেলে মানুষ তা করে। যদিও সত্যিকারের কোনো ক্ষতি করার জন্য এ রকমটা কেউ করে না।

ভালো নাকি মন্দ

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, মিষ্টি মুখের শিশু বা প্রাণী দেখলে আমরা কেন আঙ্গুল দিয়ে গুঁতা দিই কিংবা ঠোক্কর মারি?

অ্যারাগন বলছেন, ‘কেউ যখন খুব বেশি আবেগসিক্ত হয়ে পড়েন, তখন তার আচরণ দেখে বরং পুরো উল্টো কিছু মনে হয়। যেমন আপনি অতি-আনন্দে কেঁদে ফেলেন, নার্ভাস হলে হাসেন।’

‘ঠিক তেমনি,’ বলছেন অ্যারাগন, ‘খুব আকর্ষণীয় মিষ্টিমুখ দেখলে চিমটি কাটতে ইচ্ছে করে আপনার।’

এই ধরনের প্রতিক্রিয়াকে (চিমটি, খামচি বা ঠোক্কার-গুঁতো) অ্যারাগন অভিহিত করেছেন ‘গৌণ প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে। আর প্রথম দেখায় যে প্রতিক্রিয়া (কিউট, মিষ্টিমুখ, আকর্ষণীয়) তাকে বলছেন ‘মুখ্য প্রতিক্রিয়া’।

অ্যারাগন মনে করেন, আবেগের ভারসাম্য রক্ষায় গৌণ প্রতিক্রিয়া খুব দরকারি। যারা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াই ধারণ করেন তারা দ্রুততার সঙ্গে আবেগের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

বালিকা যদি হয় বেশিই কিউট

কিউট কারো ছবি দেখার সঙ্গে আবেগের বহিঃপ্রকাশ নিয়ে আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধ বের হয়েছিল ২০১২ সালে, প্লস ওয়ান জার্নালে। ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হিরোশি নিট্টনো। জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিটিভি সাইকোফিজিওলজি ল্যাবরেটরির এই পরিচালক মনে করেন, এই ধরনের অনুভূতি খুব সহজেই ইতিবাচক ও নেতিবাচকের মধ্যে রূপবদল করতে পারে।

নিট্টনো আরো মনে করেন, মিষ্টিমুখ দেখে খামচি কাটার মতো নেতিবাচক আচরণ সত্যিকার অর্থে কোনো আক্রমণ নয়। কেননা, ব্যক্তিটি ওই শিশু বা প্রাণীছানাটির কোনো ক্ষতি তো আর করতে চান না। বেশির ভাগ গৌণ প্রতিক্রিয়া বরং ‘বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ।’ নিট্টনোর ভাষায়, ‘বস্তুটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।’

নিট্টনো বলেন, ‘এই ধরনের আচরণ লক্ষ করা যায় শিশু-কিশোরদের বেলায়। যদি কোনো বালিকাকে ভালো লেগে যায় এক বালকের, তবে ওই বালক এমন ভাব দেখায় যে মেয়েটির প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই এবং সে তাকে এড়িয়ে চলার ভাণ করে।’

তথ্যঋণ : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।



মন্তব্য চালু নেই