মির্জাগঞ্জ মরহুম দানবাক্সে যত রহস্য!

দিন দিন জন্ম হচ্ছে দানবাক্সের । রাস্তার অলিতে গলিতে এর কোনো কমতি নেই । এ থেকে প্রতিদিন ই আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা । মূলত শ্রমিক শ্রেণী ও নিম্ন আয়ের মানুষকে টার্গেট করে কাঁচামালের আড়ত, চায়ের দোকান, ফুট ওভার ব্রিজের পাশে, বাজারে ঝুলানো হয় এসব দান বাক্স । অাবাসিক এলাকা, অভিজাত শপিং মলের অাশে পাশে তা দেখা যায় না । সাধারণত গরীব, অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকজন এসব দানবাক্সে টাকা দেয়। ধর্মীয় অনুভূতি, বিভিন্ন ধরনের মুসিবত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় তারা দান করেন । ব্যাবসায়ীদের বড় একটা অংশ লাভের অাশায় সকালে দান করে ব্যাবসা শুরু করেন । কিন্তু বেশির ভাগরই ধারণা নেই টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে? কার কাছে যাচ্ছে? কি উদ্দেশ্যে ব্যয় হচ্ছে? নড়ে চড়ে বসুন পাঠক ।

চ্যানেল আগামীর অনুসন্ধান প্রবাহে দৃষ্টি রাখুন । অাপনার ধর্মীয় বিশ্বাস কে কারা পুঁজি করছে খুঁজে পাবেন । সরেজমিনে রাজধানীতে, দারুল কোরআন জামেয়া-এ মোহাম্মদীয়া (দ.) দানবাক্স, মির্জাগঞ্জের ইয়ার উদ্দিন (রহ.) দানবাক্স, পাঁচ বাড়ি, হাজী বাড়ি জামে মসজিদের সহ বেশ কিছু দানবাক্স দেখা যায় । তবে সর্বাধিক দৃশ্যায়িত হয়, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জের ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.) লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার নামে দানবাক্স । সমগ্র ঢাকা জুড়েই তা দেখা যায় তবে পুরান ঢাকা, তেজগাঁও, পল্টন, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশি দৃশ্যমান । দানবাক্স থেকে সংগৃহিত ফোন নম্বরে কল দিলে কথা হয় ফুরকান মল্লিকের সাথে । তিনি নিজেকে মির্জাগঞ্জের ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.) লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার দান বাক্স গুলোর একাংশের টাকা অাদায়কারী পরিচয় দিয়ে বলেন, ঢাকায় মিরপুর, ধানমন্ডি, মুগ্দা সহ বেশ কিছু অঞ্চলে অামার দায়িত্বে দেড়শ দানবাক্স অাছে । দুইমাস পর পর গিয়ে অামি টাকা আনি । টাকার পরিমান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০/২০ হাজার পাই । অামার তো কিছু থাকেই ।

গেলো বছর জুনে একটি জাতীয় দৈনিক, প্রচার করে অাব্দুল হালিমের ঘটনা । দৈনিকটি জানায়, অপর দুই সহযোগীর দেয়া তথ্যমতে পুলিশ ঐ বছরের ৯ই মে বাসাবো এলাকায় অাব্দুল হালিমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করে শতাধিক দানবাক্স উদ্ধার করে । হালিম ডাবের পানির সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ক্রেতাদের অজ্ঞান করতো। তারপর সর্বস্ব লুটে নিতো। এর বাইরে সে বাসাবো-কদমতলী এলাকায় মির্জাগঞ্জ দানবাক্সের তত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করে। তার অধীনে থাকা রাজধানীর বাসাবো কদমতলী এলাকায় ৩০০ দানবাক্স থেকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা আয় করে বলে জানায় সে। এর অর্ধেক পায় কর্তৃপক্ষ আর অর্ধেক তার নিজের।

পাঠক, দৃশ্যপট পরিবর্তন । লক্ষ করুন এবার । দান বাক্স থেকে টাকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ফুরকান কীভাবে ব্যখ্যা করেছিলো অার এখানে হালিম কীভাবে করছে । – হালিমের এলাকার দানবাক্সেও মির্জাগঞ্জের এক ব্যক্তির ফোন নম্বর রয়েছে। মির্জাগঞ্জের আদায়কারীদের মোবাইল নম্বরই দেয়া হয়েছে বাক্সে। স্থানীয়ভাবে যারা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই তাদের কাজ। এরা আদায়কারীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। মির্জাগঞ্জের একেকজন আদায়কারীর অধীনে সারা দেশে কয়েকজন করে এজেন্ট রয়েছে। এসব এজেন্টরা আদায়কারীর কাছে যে হিসাব দেয় বাস্তবে তার থেকেও বেশি বাক্স তারা ঝোলায় । তারমানে নিজ পকেট ভারী করার উপায় ।

অনেকে এ চক্রের জালিয়াতির বিষয়টি ধরতে পারলেও ধর্মীয় বিষয় জড়িত থাকায় কোন মহল এর বিরুদ্ধে কথা বলেন না। হালিমের মতো যে কোন ব্যক্তিই শর্তসাপেক্ষে যে কোন এলাকায় দানবাক্স ঝুলিয়ে দিতে পারে। – অনেক সময় এসব দানবাক্স দূর্বৃত্ত কর্তৃক লুটপাটের খবরও পাওয়া যায় ।

অবাক করার বিষয়, বাক্সের অাশে পাশের কোনো দোকানি ই বলতে পারেন না কে বা কারা কখন বাক্স লাগিয়েছে কখোনই বা টাকা নেয় । – মধ্য বাড্ডার বালুর মাঠের দোকানি হারুন বলেন, বাক্স থেকে কেমনে দান পৌছায় কিচ্ছু বুঝি না । মনে হয় বছরের পর বছর এমনেই বাক্স পইড়া অাছে । – মির্জাগন্জ লিল্লাহ বোর্ডের অফিস সুপারের নম্বর সংগ্রহ ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয়ে তার অাচরণে উত্তেজনা অাসে । তিনি ওখানে অাগে কাজ করতেন এখন করেন না বলে জানান । নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যান, উত্তেজিত হয়ে ***** (ছাপার উপযোগী নয়) বলে ফোন কেটে দেন । তারপর তাঁকে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ।

এজেন্ট, অাদায়কারী, দূর্বৃত্ত সহ লিল্লাহ বোর্ডের কর্মকর্তাদের হাত বদল আর নানা রহস্যের পর, অবশেষে অাপনার দানের কত টাকা ব্যয় হচ্ছে লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার উন্নয়নে ? অংক কষে দেখুন । দালালদের পকেট ভারী করছেন না তো ? নাকি দান কবুল হবে ধারণায় বিষয়টি উড়িয়ে দিলেন ? অাপনার বিশ্বাস-অন্যের ব্যবসা, ভেবে দেখেছেন পাঠক ?



মন্তব্য চালু নেই