মিরাজের সাফল্যের নেপথ্য নায়করা

বাংলাদেশের ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় মেহেদী হাসান মিরাজ আজকের পর্যায়ে উঠে এসেছেন ব্যক্তিগত নৈপূণ্য দেখিয়ে।

অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা দল থেকে নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় আসেন মিরাজ। এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেন খুলনার এই অলরাউন্ডার।

চলতি বছর যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ। তার হাত ধরেই যুব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সাফল্য (তৃতীয় স্থান) পেয়েছে বাংলাদেশ। আর মিরাজ ২৪২ রান ও ১২ উইকেট নিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার। সেই মিরাজ আজ ইংল্যান্ডকে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন বল হাতে। ৫ উইকেট নেয় ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছেন মিরাজ।

মিরাজের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে অনেকেই। আজ সংবাদ সম্মেলনে দুজন মানুষের নাম স্পষ্ট করেই বললেন মিরাজ। একজন তার ছোটবেলার কোচ আল মাহবুব। আরেকজন তার বয়সভিত্তিক দলের কোচ সোহেল ইসলাম। কোচ আল মাহবুবের কাছে ব্যাটে-বলে হাতেখড়ি নেওয়ার পর ২০০৭ সালে খুলনার বিভাগের ১৩০ জন ক্রিকেটার থেকে ৩০ জনের তালিকায় নিজের নাম উঠান মিরাজ। সে সময়ে নিজেকে ওপেনার হিসেবে পরিচিত করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ ও ১৯ ক্রিকেট দলে মিরাজের গুরু সোহেল ইসলাম।

আজকের এ পর্যায়ে পৌঁছে গুরুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা মিরাজের,‘আমার স্পেশালিস্ট যে স্পিন কোচ ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছি…আমার সোহেল স্যার আমার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অ্যাসিসটেন্ট কোচ ছিল্। ১৫ থেকে এখন পর্যন্ত উনি আমাকে গাইড করছেন এবং সব সময় আমার সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিভাবে আরও ডেভোলাপ করতে পারি সেই টিপস নিতে সব সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমার বিশ্বাস আমার সাফল্যে তার ভালো লাগছে।’

জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে একই দলে খেলেছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও মিরাজ। নেপথ্যের নায়কদের মধ্যে রাজ্জাকের ভূমিকাও কম নয়।

গল্পটা মিরাজের মুখ থেকেই শুনুন, ‘খুলনার হয়ে যখন জাতীয় লিগ খেলেছি তখন রাজ ভাইকে পাশে পেয়েছি। রাজ ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ উনি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে অনেক গাইড করেছেন। জাতীয় দলে চান্স পাওয়ার পর আমার সঙ্গে উনার কথা হয়েছে। সে আমাকে একটা কথাই বলেছে যে, ‘লংগার ভার্সনে যে জিনিসটি করেছিস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটাই করবি। ওখানে ৩০-৩৫ ওভার বল করবি, এক জায়গায় বল করবি। কোনো ভেরিয়েশন দেওয়ার দরকার নেই। জাস্ট এক জায়গায় বল করবি। তুই যদি এক জায়গায় বল করে যাস তাহলে তোর বল কেউ খেলতে পারবে না। রাজ ভাইয়ের কথা মাথায় নিয়ে কাজ করছি। আমার নিজের যে ব্যক্তিগত কোচ আছে সেও একই কথা বলছে। জায়গায় বল করতে হবে জায়গায় বল করলে ব্যাটসম্যানের জন্য খেলা কঠিন।’

নিজের অভিষেক দিনেই ৩৩ ওভার বল করেছেন মিরাজ। ৪ ওভারে ৩৩ স্পেল বল করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু ১৮ বছর বয়সি মিরাজ অবলীলায় একপ্রান্ত থেকে বল করে গেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় বল করার অভিজ্ঞতা থাকায় আজ বোলিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন মিরাজ।

তার ভাষ্য,‘আসলে মানুষ অভ্যাসের দাস। আমি যখন জাতীয় লিগ খেলেছি তখন আমি আর রাজ ভাই (আব্দুর রাজ্জাক) দুজন দুই পাশ থেকে ৩০-৩৫-৩৮ ওরকম ওভার বোলিং করেছি। ওখান থেকেই আমি দীর্ঘ সময় বোলিং করতে অভ্যস্ত হয়েছি। আমাকে এটাই সাহায্য করেছে। দিনে আমার ৩০-৩৫ ওভার বোলিং করার সামর্থ্য আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের ফল আমাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে সাহায্য করছে।’



মন্তব্য চালু নেই