‘মিতু এসপির স্ত্রী জানলে খুন করতাম না’

মিতুকে হত্যা করে বাসায় ফিরে ওয়াসিম টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে দেখতে পান জিইসি মোড়ে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হয়েছেন। এই স্ক্রল দেখেই ওয়াসিম জানতে পারেন, একটু আগে তারা যাকে খুন করেছেন তিনি এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী। এটি দেখেই ওয়াসিম ফোন করেন মুসাকে। বলেন, এসপির স্ত্রীকে যে খুন করা হবে সেটি কেন তাদের বলা হয়নি। এ কথা আগে জানালে তারা খুনে অংশ নিতেন না। তখন মুসা উল্টো ওয়াসিমকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। করলে তোকেও খুন করব। আমি পুলিশের সোর্স। সব ঝামেলা আমি সামলাব।’ এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় রোববার ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওয়াসিম এ কথা বলেন।– যুগান্তর।

অপর আসামি আনোয়ার বলেছেন, তিনি মিতুর বাসার সামনে পর্যবেক্ষণে ছিলেন। খুনের আগে তাদের ৫০০ টাকা, খুনের পরে এক হাজার টাকা করে দেন মুসা। মিতুকে হত্যার দু’দিন আগেও তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।

মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার ওয়াসিম ও আনোয়ার রোববার চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তারা আরও বলেন, মুসার ভাড়াটে খুনি হিসেবে টাকার লোভেই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াসিম ও আনোয়ার জবানবন্দিতে বলেছেন, তাদের বলা হয়েছিল- জঙ্গি কানেকশন আছে এমন এক মহিলাকে হত্যা করতে হবে। ওই মহিলাকে হত্যা করলে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে। এ কথা বলেই মুসা সহযোগী খুনিদের ভাড়া করেছিলেন। গত ৫ জুন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার দু’দিন আগেও একবার হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল কিলাররা। একই ঘটনাস্থল জিইসির মোড়ে গিয়েছিল ৭ খুনি। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু সেদিনও যথারীতি বাচ্চাকে স্কুলবাসে তুলে দিতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু কিলার ওয়াসিমের একজন পরিচিত লোক জিইসি মোড়ে তাকে দেখে ফেলায় এবং লোকজন বেশি থাকায় সেদিন তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাননি। ঠিকই দু’দিন পর তারা এ হত্যকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। তবে তারা যে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুন করতে যাচ্ছেন সেটি জানতেন না বলে জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন। ওয়াসিম বলেন, তিনি ফাঁকা গুলি করেন। মুসা মিতুকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন। আর নবী মিতুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। মুসার সরাসরি অংশগ্রহণ ও নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও মুসাকে কারা নির্দেশ দিয়েছিল কেনই বা মুসা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা নিল সেটি এখনও অজানা রয়েছে। জবানবন্দিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য আসেনি।

পুলিশ ও তদন্ত সূত্র জানায়, ৪-৫ মাস আগে এ হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হয়। মুসা নিজেই ওয়াসিমসহ অন্য খুনিদের বিভিন্ন সময়ে যুক্ত করেন। হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয় ১৫ দিন আগে মুসার বাসায়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা গেলে ৭-৮ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলেও জানান মুসা। এতে সবাই রাজি হন। ঘটনার ৫-৬ দিন আগে থেকে তারা ঘটনাস্থল রেকি করে আসেন। কে কোথায় দাঁড়াবেন কে কী কাজ করবেন তাও ঠিক করেন। ঘটনাস্থল রেকি করার জন্য মুসা তাদেরকে এক-দেড় হাজার টাকা করে দিতেন। ওয়াসিম জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, ঘটনা ঘটানোর আগে মুসা তাকে নিজের বাসায় ৩-৪ দিন পিস্তল চালানো শেখান। ঘটনার দিন সোয়া ৫টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মুসা ও নবী মোটরসাইকেলে করে এসে মিতুকে ধাক্কা দেন। মিতুর বাসার সামনে অবস্থান নেয়া আনোয়ার তাকে ইশারা করলে তিনি রাস্তা পার হয়ে ঘটনাস্থলে যান। হত্যা মিশন সম্পন্ন হওয়ার পর মুসা, নবী ও ওয়াসিম মোটরসাইকেলে করে কাপাসগোলা বড় গ্যারেজ এলাকায় চলে যান। সেখানে মোটরসাইকেলে গোলযোগ দেখা দেয়ায় সেটি ফেলে রেখে যে যার মতো পালিয়ে যান।

মুসা ও ভোলার ‘আটক’ নিয়ে ধূম্রজাল : এদিকে বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স আবু মুসা সিকদার ও এহতেশামূল হক ভোলার ‘আটক’ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদেরকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করেছে দু’জনের পরিবার। কিন্তু তাদের আটকের বিষয়টি পুলিশ এখনও স্বীকার করছে না। আটক ভোলা ও মুসা দু’জনই এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘদিন সোর্স হিসেবে কাজ করেছেন। পরিবারের দাবি, মুসাকে গত মঙ্গলবার সকালে ও ভোলাকে ওইদিন বিকালে রাজাখালী গুলবাহার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পার হলেও তাদের পরিবার এখনও দু’জনের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি।



মন্তব্য চালু নেই