মায়ের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার শিশুটি : শরীরে আগুনের ছ্যাকা ও কামড়ের ক্ষতচিহ্ন

ও আমার মেয়ে। ওকে আমি মারব, কাটব তাতে কার কী? ঘরের মেয়ে ঘরের কাজ না করে কি অন্যের বাড়িতে কাজ করবে? মাইরের কাজ করেছে তাই মেরেছি।’

কেবল নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি মুন্সিগঞ্জের নির্যাতিত শিশু সুবর্ণার (৬) পালক মা কল্পনা বেগম। শিশু নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার এ ভাবেই সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

জেলার রামপাল ইউনিয়নের বল্লাল বাড়ি এলাকার সিরাজ মিয়ার বাড়ি থেকে সুবর্ণাকে উদ্ধার করা হয়। বুধবার দুপুরে তার পালক মা কল্পনা বেগমের অমানুষিক নির্যাতনের একপর্যায়ে এলাকাবাসী শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।

শিশুটিকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা বেগম বলেন, ‘ও আমার মেয়ে। ওকে আমি মারব, কাটব তাতে কার কী? মাইরের কাজ করেছে তাই মেরেছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছোট থাকতেই শিশুটির মা ভারতী মারা যান। এ সময় সিরাজ মিয়ার স্ত্রী কল্পনা বেগম তাকে পালক এনে বাসার যাবতীয় কাজকর্ম করাতে থাকেন। শিশুটিকে অনেক ভারি কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কাজ ঠিকমতো না করলে অনেক মারধরও করা হতো।

বৃহস্পতিবার শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাকে দিয়ে বাসার সকল কাজ করানো হতো। কাজ না পারলে তার পালক মা ইচ্ছেমতো মারধর করত। এমনকি কামড়ও দিত। অনেক চিৎকার কান্নাকাটি করলেও অত্যাচার বন্ধ করত না। শরীরে আঘাতের যন্ত্রণায় ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না শিশুটি।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শৈবাল বসাক জানান, শিশুটির শরীরে আগুনের ছ্যাকা ও চোখে-মুখে মারের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। এত কম বয়সে এভাবে অত্যাচার শিশুটির মনে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলেছে। তার আরো উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুচ আলী জানান, এ ঘটনায় বুধবার রাতে শিশুটির বাবা চাঁন মিয়া বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন আইনে কল্পনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ কল্পনা বেগমকে গ্রেফতার করেছে। তিনি থানা হেফাজতে রয়েছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি কার হেফাজতে থাকবে তা নিশ্চিত করতে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত শিশুটিকে থানা হেফাজত থেকে তার বাবার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।



মন্তব্য চালু নেই