মাশরাফির হৃদয় কাঁদে দুস্থ, অসহায় মানুষের জন্য

কৌশিক-মাশরাফি বিন মুর্তজা—আমাদের নড়াইল এক্সপ্রেস। খেলোয়াড় মাশরাফিকে তো চেনাই আছে। ব্যক্তি মাশরাফি কেমন? দুরন্ত, আমুদে, হাসিখুশি, মিশুক, সদা প্রাণচঞ্চল—এই তো! মাঠে মাশরাফি যেমন দুরন্ত, মাঠের বাইরে ততটাই অনন্য।

২০১৪ সালে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি থেকে বেশি টাকার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। থেকে গেছেন আগের ক্লাব মোহামেডানেই। শোনা যায়, দুই ক্লাবের প্রস্তাবিত টাকার পার্থক্যটা প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি হবে।

কেন মোহামেডানে রয়ে গেলেন? সংবাদমাধ্যমে মাশরাফি বললেন, ‘কমিটমেন্টের কারণে।’ হ্যাঁ, দেশের অন্যতম সেরা পেসার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।

এ কারণে মাশরাফির জবাব, ‘মোহামেডানকে আগেই কথা দিয়েছিলাম বলে অন্য কোনো দলের সঙ্গে আলাপ করিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমি সব সময় কমিটমেন্ট ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি।’

এ তো একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। মাশরাফি নড়াইলে গেলেই সাড়া পড়ে যায়। দেশের এক তারকা ক্রিকেটার আসবেন বলে নয়, মানুষ অপেক্ষা করে বিরাট হূদয়ের এক মানুষের জন্য। যার হূদয় কাঁদে দুস্থ, অসহায় মানুষের জন্য। যিনি সমব্যথী হন মানুষের দুঃখ-কষ্টে। হাতটা বাড়িয়ে দেন বিপদগ্রস্ত মানুষের দিকে।

নিরহংকার মাশরাফি বন্ধুকে স্বাবলম্বী করতে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ পৌর সুপার মার্কেটে দোকান করে দেন। তাঁরই অর্থায়নে চলে নড়াইলের ‘শুভেচ্ছা ক্লাব’। নানা আতাউর রহমানের নামে চালু হওয়া ক্রিকেট একাডেমি চলে মাশরাফির অর্থায়নে। বন্ধু রাজু, সাজু, অসীমকে জীবনের পথ দেখান।

নিজের টাকায় আর্থিক সংকটে হাবুডুবু খাওয়া বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টার কোনো খামতি নেই ‘নড়াইল এক্সপ্রেসে’র। এমনকি তাঁর খুব কাছের বন্ধু হিসেবে আছে এমন অনেকে, সমাজ যাঁদের অচ্ছুত বলে দূরে সরিয়ে রাখে। কিন্তু তাঁদেরও বুকে টেনে নেন মাশরাফি।

বন্ধুদের জন্য তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা, মানুষের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসা, দুস্থজনের পাশে দাঁড়ানো—এ কারণেই নড়াইলে মাশরাফি দূর আকাশের তারা নন, যেন অতি আপনজন। খু-উ-ব কাছের কেউ। কেবলই নড়াইল কেন, মাশরাফি তো সারা বাংলাদেশের। কেবল ক্রিকেটার হিসেবেই নয়, আকাশসম হূদয়ের এক মানুষ হিসেবে।

মাশরাফি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকার একজন শুধু নন। তারকা হয়েও তিনি দূরাকাশে নন, হাতের কাছেই থাকেন। মাশরাফি যেন বলতে চান, ‘আমি তোমাদেরই লোক!’ মাশরাফি সত্যিই অন্য রকম!



মন্তব্য চালু নেই