মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি বিতাড়ন জানুয়ারিতে

মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরে আসতে হবে। এ সময়ের মধ্যে চারশ রিঙ্গিত জমা দিলে সাজা ভোগ করা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন তারা। এই সুযোগ না নিলে জানুয়ারি থেকে অবৈধ কর্মীদের বিতাড়িত করা হবে।

ফলে জানুয়ারির পর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। এই আশঙ্কারমধ্যেই আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কুয়ালালামপুরে জনশক্তিসংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা থাকবে। তারা তো (অবৈধ বাংলাদেশিরা) বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। ফলে তাদের বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে।’

সচিব আরও বলেন, ‘জিটুজি পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। আগামী জুনের মধ্যে আরও ২০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশাকরি। তার মধ্যে ১২ হাজার যাবেন সারওয়াক প্রদেশে। বনায়নের বাইরে নতুন খাত খোলারকারণে অন্যান্য খাতেও কর্মী যাবেন। এগুলো সবই ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।’

হাউস ম্যানেজার পদে নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হবে। মালয়েশিয়া সাধারণত সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক কর্মী অবৈধভাবে কক্সবাজার দিয়ে সমুদ্রপথে জাহাজে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ পর্যটন ভিসায় গিয়েও থেকে যাচ্ছেন।

মালয়েশিয়া ইতোপূর্বে অবৈধ কর্মীদের সিক্স পি কর্মসূচির আওতায় ছয় ধাপে নিবন্ধিত হয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তখন অনেক কর্মী দালালদের অর্থ দিয়েও বৈধ হতে পারেননি। দালালদের হাতে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। এসব প্রক্রিয়ায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে আছেন।

বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে তাদের বৈধ করার চেষ্টা করলেও মালয়েশিয়া এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি সংক্রান্ত ইস্যুতে যে ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো দেখাশোনা করার জন্য কারিগরি পর্যায়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ আছে। এই কমিটির বৈঠকে যোগ দিতেই একটি প্রতিনিধি দল আসছে মাসে মালয়েশিয়া যাবে।

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা টেলিফোনে জানিয়েছেন, পর্যটন ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে থেকে যাওয়া, জাহাজে করে অবৈধভাবে যাওয়া এবং আগে দালালদের হাতে প্রতারিত হয়ে যে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অবৈধভাবে আছেন, তাদের অবস্থা খুবই করুণ। তারা কাজ পাচ্ছেন না। কেউ স্বল্প মজুরিতে কাজ পেলেও তা পালিয়ে থেকে করতে হচ্ছে। অবৈধদের বৈধ করার কোনো আশ্বাস মালয়েশিয়া এখনও দেয়নি। তার উপর অবৈধদের হাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই। ফলে তারা বাংলাদেশের নাগরিক নাকি রোহিঙ্গা সেটাও বোঝা যায় না।

এদিকে মালয়েশিয়া সেবা খাত থেকে বিদেশি কর্মীদের সরিয়ে পর্যায়ক্রমে নিজ দেশের লোকদের নিযুক্ত করার দীর্ঘ মেয়াদী নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে। ফলে এই খাতেও সামনে বাংলাদেশিদের অসুবিধা হতে পারে।

ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দালালরা কম বেতনে কর্মী সরবরাহ করে বিধায় জিটুজি পদ্ধতির বাইরে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন কোম্পানি আগ্রহী হয়। এতে কর্মীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দালালদের পকেটে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে জিটুজি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিগুলো চাহিদা দিচ্ছে কম। এ কারণে জিটুজি পদ্ধতিতে কম লোক যাচ্ছে। বনায়নের বাইরে অপরাপর খাতে বাংলাদেশ থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে লোক নিয়োগ করা হবে।

মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বৈধ ও অবৈধ মিলে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। রিক্রুটিং এজেন্টদের প্রতারণার কারণে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে মালয়েশিয়া। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর জিটুজি পদ্ধতিতে লোক পাঠানোর চুক্তি হওয়ার পর এই বন্ধ শ্রমবাজার ফের চালু হয়। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৯০০ রিঙ্গিত মাসিক বেতনে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সারওয়াক প্রদেশে কর্মীদের নিম্নতম মজুরি ৮০০ রিঙ্গিত। ফলে সারওয়াকে জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে হলে আরও একটি চুক্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। এসব বিষয় নভেম্বরে যৌথ কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।

সচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘সারওয়াকের নিম্নতম মজুরির নিয়ম বাংলাদেশ মেনে নেবে। তবে ছুটি কিংবা অসুস্থ হলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ আলোচনা করে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে হাউস ম্যানেজার নামে নারী গৃহকর্মী নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ নিয়ে যৌথ কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’



মন্তব্য চালু নেই