মার্কিনিরা সেদিন পাকিস্তানিদের পক্ষই নিয়েছে : ইনু

একাত্তরে মানবাধিকার অপরাধের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করার এবং সরকারিভাবে একটা বিবৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেছেন, একাত্তরে একটি মহান যুদ্ধ হয়েছে। যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিলো তারা অনেক বড় অপরাধ করেছে । স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান মানে নৈতিক অপরাধ করা। দু:খজনক হলেও সত্য যে, মার্কিনিরা সেদিন পাকিস্তানিদের পক্ষই নিয়েছে।

রোববার দুপুরে জাতীয় যাদুঘরে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ অপরাধের বিচারের পক্ষে কোন মতামত দেয় নি। যদিও এই ৪২ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়েছে তার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়েছে। এটি মার্কিন দ্বৈতনীতি। আশা করি, এ বিচার নিষ্পত্তিতে তারা একটি ভূমিকা রাখবে বা বিবৃতি দেবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একই কারণে পাকিস্তানও যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি গত ৪২ বছরে নিষ্পত্তি করে নি। কামারুজ্জামানের বিচার সমাপ্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি মন্ত্রীরা ন্যাক্কারজনক বিবৃতি দিয়েছে।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করেন।

তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, ‘এ বিচার গণতন্ত্র সম্মত। এখানে আসামি পক্ষ উকিল দিতে পারে, জেরা করতে পারে এবং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় যদি কোন বিচারক ভুল করেন তাকে বদলে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। আদালতে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেন। যদি কোন বিদেশি নাগরিক বিচার প্রক্রিয়া দেখতে চান সে সুযোগও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই।’

মাঝামাঝি অবস্থান থেকে সরে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার আবেগের বিষয়। তাই বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে বা সর্বোচ্চ সাজা না হলে জনগণ আবেগে ফেটে পড়ে এবং ফুঁসে ওঠে। এ আবেগকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১২ হাজার পরিবার সরাসরি মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলো। তাদের বিচারে ৭৩ টি ট্রাইব্যুনাল হয়েছিলো। বিচার শুরু হয়েছিলো। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মোস্তাক-জিয়া বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। দেশে এখনো এই ১২ হাজার পরিবার আছে যারা কোন না কোন যুদ্ধাপরাধে যুক্ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি বলছে, বিচার চাই। কিন্তু তাদের শাসনামলে বিচার শুরু হয়নি। তারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। ক্ষমতার অংশীদার করেছে। এ বিচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি কিন্তু বিএনপি। তারা যুদ্ধাপরাধীদেরকে তাদের ছাতার তলে আশ্রয় দিচ্ছে। এর সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু বিভ্রান্ত রাজনীতিক জোট বেঁধেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান না নেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ হবে জঙ্গিবাদ, জামায়াত ও বিএনপিকে উৎখাতের জন্য। তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ঐক্য ন্যাপের পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি গোলাম সারওয়ার।



মন্তব্য চালু নেই