মানুষ বেচাকেনার হাট

‘আসেন ভাই, আমাগো নিয়্যা যান। কাজ কাম ভালই পাইবেন। বড় বড় বোঝা মাথায় নিতে পারি, বেশি বেশি ধান কাটতে পারি।’ মানিকগঞ্জে শ্রম বিক্রি করতে এসে এমন কথা বলেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আশরাফ, সুমন, হাবিব, আকমল ও ইজ্জত আলী। অভাবী এসব মানুষ এভাবেই কথার ছলে নিজেদের বিক্রি করছে। আর ক্রেতারা মানুষ বেচাকেনার হাটে গিয়ে সুস্থ-সবল ও দক্ষ কামলা কিনে চলতি মওসুমে ধান কাটার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

সরজমিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে, নবীন সিনেমা হলের সামনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য বসে আছে। কখন বিক্রি হবে সে চিন্তায় মাথার ওপর রোদ-বৃষ্টি নিয়েও অপেক্ষা করছেন তারা। আর ফসল উৎপাদনকারী কৃষকরা দরদাম করে তাদের নিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত চলে এ মানুষ কেনাবেচার হাটের কার্যক্রম। দেখা গেছে, এখানে সুস্থ-সবল কামলার দিকে ক্রেতাদের নজর থাকে বেশি।

রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, নড়াইল, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত অভাবী মানুষ প্রতিদিনই ছুটে আসছেন মানিকগঞ্জের এ মানুষ বেচাকেনার হাটে। প্রত্যেকটি এলাকা থেকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ জনের একেকটি গ্রুপ হয়ে বসে থাকে ক্রেতার অপেক্ষায়। এ হাটে একেকটি কামলা একদিনের জন্য বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে সাড়ে ৩০০ টাকায়। তবে স্বাস্থ্যবান ও সুঠাম দেহের অধিকারী কামলাদের কদর বেশি। তাদের মজুরিও বেশি। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আশরাফ, সুমন, হাবিব, আকমল, ইজ্জত আলী নবীন সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে এক ক্রেতাকে বলছেন, ‘আসেন ভাই, আমাগো এই ৫ জনকে নিয়্যা যান। কাজ-কাম ভাল পাইবেন। বড় বড় বোঝা মাথায় নিতে পারি, বেশি বেশি ধান কাটতে পারি।

এ কথা বলায় ঘিওর থেকে আসা জাবেদ আলী নামের ওই ক্রেতা দরদাম করে তাদের নিয়ে চলে যেতে দেখা গেল। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার লাভলু মিয়া জানালেন, প্রতি বছরই ধান কাটার সময় মানিকগঞ্জে আসি। এখানে শ্রমের মজুরি ভাল পাই। ৮ জনের একটি দল শুক্রবার রাতে মানিকগঞ্জে এসেছি। এখানও আমরা কেউ বিক্রি হইনি। তবে বিকালের মধ্যে আশা করি আমাদের কেউ না কেউ নিয়ে যাবেন। গাইবান্ধার আমির, খোরশেদ, আনিস, আবুল এসেছে গতকাল সকালে। তারা জানালেন, তাদের এলাকায় ধান কাটা শেষ করেই মানিকগঞ্জ আসা। প্রতি বছরই আসা হয়। থাকি প্রায় এক মাস। ৪০০ টাকা রেটে তারা কাজ করেন বলে জানান।

রংপুরের পীরগাছা থেকে এসেছে তিন ভাগে ৩০ জন কামলা। এদের মধ্যে জয়নাল, জসিম, আজগর জানান, পেটের তাগিদেই এত দূর থেকে মানিকগঞ্জে এসেছে। এখানে কামলার দাম বেশি শুনেছে বলেই তারা এসেছে। এছাড়া বগুড়ার আরশেদ আলী, নাসিম, কবীর ও আন্নেস জানান, কাজ না করলে পরিবার নিয়ে না খাইয়ে থাকতে হবে।

অভাবের সংসার, তাই শ্রম বিক্রি করতে এখানে এসেছি। তাদের আক্ষেপ রাস্তার পাশে কিংবা মার্কেটের সামনে তারা জড়ো হলেই ব্যবসায়ী ও পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। রাতে থাকার জায়গা না থাকায় রাস্তার আশপাশে তাদের ঘুমাতে হয়। কামলা ক্রয় করতে আসা মানিকগঞ্জের ঘিওরের শমসের উদ্দিন জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে রোবো ধান রোপণ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছে। এখান ধান কাটার সময় হয়েছে বিধায় কামলা নিতে এখানে এসেছি। ৪০০ টাকা রোজে ৫ জন কামলা নিয়ে গেলাম।



মন্তব্য চালু নেই