মানসিক রোগ বিষয়ে জেনে নিন ৯টি ভুল ধারণার কথা

ভারতের শহরাঞ্চলে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে চলেছে। মনের সমস্যা বেড়েই চলেছে। মানসিক সমস্যার বিষয়টি নিয়ে মানুস খুব বেশি কথা বলতে চায় না। এটা যেন নিষিদ্ধ কোনো বিষয়। তা ছাড়া শারীরিক রোগ ছাড়া মনের সমস্যাকে রোগ বলে মেনে নিতেও কষ্ট মেয়েদেন। আলোচনার বাইরে থাকে বলেই একে নিয়ে নানা ভুল ধারণা জেঁকে বসেছে মানুষের মনে। প্রচলিত এসব ভুল ধারণার ইতি ঘটা দরকার। সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ বিষয়ে এমনই কিছু প্রচলিত ধারণার কথা তুলে ধরেছেন। এগুলো পুরোপুরি ভুল।

ভুল ধারণা- ১ : অল্প কিছু মানুষ মানসিক সমস্যা ভোগেন।
বাস্তবতা : বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক হারে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ড. কেরসি চাবড়া জানান, একটা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের ২০ শতাংশই বিষণ্নতার মতো মানসিক বিপর্যয়ের শিকার। গত তিন বছরে মানসিক রোগীর সংখ্যা ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা। হিরন্ময়

ভুল ধারণা- ২ : মানসিক সব সময়ের জন্য আসে।
বাস্তবতা : ড. কেরসি জানান, মানসিক সমস্যা জর্জরিত ৭০ শতাংশ রোগীই সুস্থতা লাভ করেন। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। মানরিক রোগ নিয়ে প্রচুর গবেশণা করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের রোগ সামলে আনা সম্ভব। অধিকাংশ মানুষই সঠিক সশয় চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ভুল ধারণা- ৩ : শিশুর মানসিক সমস্যা হয় বাবা-মায়ের দোষে।
বাস্তবতা : পরিবেশ, জেনেটিক অবস্থা, বায়োলজিক্যাল অবস্থা, রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীবতা, গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল বা মাদক গ্রহণ এবং মানসিক চাপসহ বহু কারণে শিশু মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। বাবা-মায়ের চিকিৎসায় অবহেলার কারণে শিশুর অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।

ভুল ধারণা- ৪ : যে কেউ নিজের চেষ্টায় বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
বাস্তবতা : বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র পেশাদার বিশেষজ্ঞরাই মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করতে পারেন। থেরাপিস্ট এবং চিকিৎসকদের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা উচিত। যেমন- বিষণ্নতার চিকিৎসায় প্রয়োজন মেডিকেশন এবং কাউন্সেলিং। যে কোনো মানসিক সমস্যা সিরিয়াস স্বাস্থ্যগত অবস্থার জানান দেয়। তাই বিশেষজ্ঞ ছাড়া এর চিকিৎসা অন্য কেউ করতে পারবে না।

ভুল ধারনা- ৫ : মাদকে আসক্তি জীবনযাপনের পদ্ধতি এবং এতে ইচ্ছাশক্তির অভাব ফুটে ওঠে।
বাস্তবতা : অনেক কারণে মানুষ আসক্ত হয়ে ওঠে। এর পেছনে সাইকোলজিক্যাল এবং সাইকিয়াট্রিক বিষয় কাজ করে। আসক্ত হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত না করে এ থেকে বের করে আনা বেশ কঠিন কাজ।

ভুল ধারণা- ৬ : ওষুধই ভালো, থেরাপি মানে সময়ের অপচয়।
বাস্তবতা : অনেকেই এমনটা মনে করেন। কিন্তু মনের আবেগ ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর জন্য সর্বোত্তম পন্থা থেরাপি। হরমোনগত সমস্যা, জেনেটিক অবস্থা আর ট্রমা ওষুধ দিয়ে সারে না।

ভুল ধারণা- ৭ : কালো জাদু কিংবা অশুভ কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয়।
বাস্তবতা : এটা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা বায়োকেমিক্যাল, স্ট্রাকচারাল এবং জেনেটিক বিষয়।

ভুল ধারণা- ৮ : সারাজীবন চিকিৎসা নিতে হয়।
বাস্তবতা : ড. কেরসি জানান, মানসিক বিপর্যস্ততায় চিকিৎসায় প্রাথমিক ধাপ এক বছর পর্যন্ত গড়ায়। আর পর আর বেশি সময় নাও লাগতে পারে। চিকিৎসা নিলে খুব দ্রুত অবস্থার উন্নতি ঘটে।

ভুল ধারণা- ৯ : শিশুদের মানসিক সমস্যা হয় না।
বাস্তবতা : সীমা জানান, শিশুদেরও মানসিক সমস্যা হতে পারে। জেনেটিক অবস্থা বা বিষণ্নতার কারণে সাধারণত শিশুদের মানসিক রোগ দেখা দেয়। অনেক শিশু অন্যদের মনোযোগের অভাবজনিক কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া



মন্তব্য চালু নেই