মানবপাচারে এখন সক্রিয় নারী দালাল

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে মালয়েশিয়ায় আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের আফতেরা বেগম নামে এক নারী দালাল সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। সাগরপথে পাড়ি জমানো বেশ কয়েকজনের সন্ধান পাচ্ছেন না স্বজনরা। জানা গেছে, মার্চ-এপ্রিল মাসে আফতেরা বেগম জেলার অর্ধ শতাধিক যুবককে মালয়েশিয়া সাগরপথে পাচার করেছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরে ও বাংলাদেশীর লাশের খবরে এবং ইন্দোনেশিয়ায় শরণার্থী শিবিরে আটকের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাগরপথে পাড়ি জমানো যুবকদের স্বজনরা।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কামরূপদলং গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে জুনেদ আহমদ, মছদ আলীর ছেলে সেলিম উদ্দিন, সাজু মিয়ার ছেলে জমির আলী, তাজুল ইসলামের ছেলে আবদুল গফ্‌ফার, উসমান গনিসহ ৭-৮ যুবক ২ সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ায় মাফিয়াদের হাতে বন্দি রয়েছেন এবং সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের নুরুজ আলীর ছেলে কামাল হোসেন, একই গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে শামীম হোসেন, সুমন মিয়া, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বানীপুর গ্রামের উমর আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমীন দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।

ভুক্তভোগী স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কামরূপদলং গ্রামের সাদ্দক আলীর স্ত্রী আফতেরা বেগম স্থানীয় যুবকদের টোপে ফেলে পরিবারের লোকজনদের না জানিয়ে বিনা টাকায় দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাচার করছে। গত দুই সপ্তাহ পূর্বে সাগরপথে কামরূপদলং গ্রামের ছয় যুবক ও পাগলা ব্রাক্ষণগাঁও গ্রামের এক যুবককে মালয়েশিয়ায় মাফিয়াদের হাতে পৌঁছায়। যুবকদের দালাল আফতেরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে প্রথমে পাঠালেও মাফিয়াদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করতে বর্তমানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করছেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে যুবকদের উপর নেমে আসবে হত্যা, নির্যাতন।

এনিয়ে গত ২ দিন পূর্বে উপজেলার পাগলা এলাকার যুবককে উদ্ধার করতে দালাল আফতেরা বেগমকে নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক বৈঠক বসে। বৈঠকে আফতেরা বেগমের কাছে টাকা সংগ্রহ করতে নিঃশ্ব ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নেন।

এ ছাড়াও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের দালাল সিন্ডিকেটের নেতা আবুল কাসেম, শিমুলবাক ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত আবদুল হাসিমের ছেলে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরাই, একই গ্রামের আবদুল মতলিবের ছেলে জফর মিয়া, আবদুল খালিকের ছেলে জুহেন আলী, হাবিবুর রহমান, শওকত, শিমুলবাক ইউনিয়নের কেশবপুরের ইমান আলী, শিমুলবাক ইউনিয়নের বাহাদুরপুর হুগলী গ্রামের আবদুল কদ্দুছ, নুরপুরের সেলাউর রহমান, গনিগঞ্জের সৈয়দুর রহমান, আফতেরা বেগম, জামালগঞ্জ উপজেলার সেলমছপুর গ্রামেনর শামছুল ইসলামসহ একটি দালাল চক্র প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের শ্রমিকদের অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাঠাচ্ছে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের তৎপরতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগর পথে মালয়েশিয়াগামীদের টাকার যোগান দিতে অনেকে বাড়ি ভিটি, গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধক বা সাফ বিক্রি করে নিঃশ্ব বলে স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে। সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে কেবল আর্থিকভাবে নিঃশ্ব হচ্ছে না, নিখোঁজ এবং মৃত্যুর কবলেও পড়ছে অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন জানান, দালাল আফতেরা আমাদের না জানিয়ে আমাদের ছেলেদের মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে। বর্তমানে তারা মাফিয়াদের কাছে বন্দি। মাফিয়ারা প্রতিদিন দুই বার করে নির্যাতন করে এবং খাবার না দিয়ে ক্ষুধার্ত রাখে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে স্থানীয় দালাল ভাল বার্তা দিলে তাদেরকে খাবার দেয় ও নির্যাতন করে না। তাই দালাল আফতেরার কথামতো টাকা দিয়ে তাদের মুক্ত করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানার জন্য দালাল আফতেরা বেগমের মোবাইল ফোনে কল করে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া হলে তিনি প্রথমে সংযোগ কেটে দেন এবং পরে কল করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল আমিন জানিয়েছেন, অশিক্ষা, দারিদ্র্যতা সুষ্ঠু জ্ঞানের অভাবে সহজ সরল লোক প্রতিনিয়ত পাচারের শিকার হচ্ছে। স্থানীয় দালাল চক্রকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। অভিযোগ পেলে দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই