মানবতার জয়গানে রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ

পূর্ব দিগন্তে আজ উদিত হয়েছে নতুন সূর্য। বর্ষ পঞ্জিকায় আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ১৪২৪ সনের দিন গণনা। বিশ্ব মানবতার জয়গানে রাজধানীর রমনার বটমূলে শুরু হয়েছে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে এবার রমনার বটমূলে পঞ্চকবির গান, একক গান, সম্মিলিত গান, আবৃত্তি ও কবিতার সঙ্গে ছিল পালা। দর্শক-শ্রোতা মজানোর জন্য কোনো আয়োজনের ঘাটতি রাখেনি ছায়ানট। ঐতিহ্য অনুযায়ী অাজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৬টায় ১৪২৪ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করলো ছায়ানট।

তবে মানবতার জয়গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। মানবতার বারতা ছড়িয়ে দিতে আয়োজনের শুরুতেই সরোদ বাদন। সরোদে সুরের মূর্ছনা ছড়ান রাজপুর চৌধুরী।

‘আলোকের এই ঝর্নাধারায় ধুইয়ে দাও’ গানে গানে রমনার বটমূলে বাংলা নতুন বছরকে আনুষ্ঠানিক বরণ করে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখেও সমবেত কণ্ঠে গায় সেই গান, সংগঠনটি যা গেয়ে আসছে গত পঞ্চাশ বছর ধরেই।

এছাড়া গানে, কবিতায়, আবৃত্তিতে শোনানো হয় মানবতার জয়ধ্বনি। তাগিদ জাগায় বাঙালি জাতিকে নতুন করে জেগে ওঠার ক্ষেত্রে। এবারও পুরো আয়োজনে প্রায় ১৫০ জন শিল্পী অংশ নিয়েছে।

সরোদ বাদন শেষে, পঞ্চকবির গান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদ সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান আয়োজনের মূল আকর্ষণ। একে একে পরিবেশিত হবে অন্যদের কালজয়ী সব গানও।

ছায়ানটের সহ-সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘বর্ষবরণের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন চলছে প্রায় মাসখানিক আগে থেকেই। এবারে বর্ষবরণে ‘দিওয়ানা মদিনা’পালা একটি বিশেষ সংযোজন।’

ছায়ানটের যাত্রা ১৯৬১ সালে, একেবারে অগ্নি ইতিহাস সৃষ্টির উষালগ্নে। ক্ষুরধার চেতনার দীপ্ত বাসনা নিয়ে প্রতিটি ক্ষণ পার করেছে দেশের শীর্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’। বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করে দীর্ঘ এই পথচলায় অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আলোর শিখা জ্বালিয়ে রেখেছে সংগঠনটি। ছায়ানটের জন্মকথার মতো আরেকটি ইতিহাস জন্ম দিয়ে একেবারেই পরিণত বয়সে রূপ নিয়েছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. নওয়াজেশ আহমেদ রমনা পার্কের ওই বটমূলটি প্রথম খুঁজে বের করেন ১৯৬৭ সালে। এই সংগীতানুরাগী ছায়ানটকে প্রস্তাব দেন যে, মুক্ত খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির মাঝে শান্তির বার্তা নিয়ে এ বটমূলে হতে পারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।

সেই থেকে রমনা বটমূলেই হচ্ছে বাংলা বর্ষবরণের বার্ষিক প্রধান আয়োজনটি। কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে বন্ধ ছিল।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রমনার আয়োজন নিয়ে এখন দিনভর ব্যস্ত থাকছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলছে নানা নির্দেশনায় কঠোর অনুশীলন ও রেওয়াজ।

বর্ষবরণের ১৯৬৭ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বটমূলের প্রভাতি অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের আলোকচিত্রের প্রদর্শনী চলছে ৩১ মার্চ থেকে। ছায়ানট ভবনের তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে বাঙালির জাতীয় চেতনার উন্মেষ থেকে সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ পর্ব অবধি কালানুক্রমে। আজ রমনার বটমূলে প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে শেষ হবে ছায়ানটের মাসব্যাপী কর্মসূচি। শেষ হবে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে সাড়ে আটটা থেকে শুরু হবে পালাগান, যা সংগঠনটির বর্ষবরণের ইতিহাসে এবারই প্রথম।



মন্তব্য চালু নেই