মাদারীপুরে কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় মোবাইল চুরির অভিযোগে মেহেদী হাসান (১৪) নামের এক কিশোরকে গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। নির্যাতনকারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বেপারির ছোট ভাই কামরুল হোসেন বেপারি। তাকে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে, শিবচরের কাদিরপুর ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিকে নগর পশ্চিম কাজীকান্দি গ্রামের মনোয়ার খানের ছেলে মেহেদী হাসান একজন ডিশ লাইন কর্মী। সে বিভিন্ন গ্রামে ডিশ সংযোগ দেয় এবং মেরামতের কাজ করে। ঈদের আগে কাদিরপুর ইউনিয়নের বেপারিকান্দি গ্রামের কামরুল হোসেন বেপারির ঘরে মেহেদী ডিশ লাইনের কাজ করে। ওইদিনই কামরুল হোসেনের ২টি মোবাইল সেট চুরি হয়। এ ব্যাপারে তিনি মেহেদী হাসানকে সন্দেহ করেন। এরই জেরে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ডিশ লাইনের কাজ করার কথা বলে মেহেদী হাসানকে বাড়িতে ডেকে আনেন কামরুল হোসেন। এরপর মোবাইল চুরির কথা বলে মেহেদীকে মারধর করেন তিনি। এরপর তাকে উঠানের কামরাঙ্গা গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখে দু’দিন ধরে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতনের কথা জেনেও ভয়ে মেহেদীর পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি। স্থানীয় কোনো একটি সূত্রে পুলিশ খবর পেয়ে রোববার বিকালে মেহেদীকে উদ্ধার করে এবং শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

শিবচর থানার এসআই জাকির হোসেন ও আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত কামরুলের বাড়িতে যাই। সেখানে তার বাড়ির একটি কামরাঙ্গা গাছের সঙ্গে হাত-পা ও গলায় লোহার শেকল পরা অবস্থায় মেহেদীকে দেখতে পাই। এরপর তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তার অবস্থা গুরুতর। নির্যাতনকারী কামরুলকে আটক করা হয়েছে।

মেহেদী হাসানের মা পারুল বেগম বলেন, আমরা অনেক গরিব মানুষ। ওরা প্রভাবশালী। তাই ভয়ে পুলিশকে কিছু বলতে সাহস পাইনি। কারণ ওরা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। এখন মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ ওরা বলেছে, মামলা করলে আমাদের মেরে ফেলবে।

কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদিয়া তাসনিন মুনমুন বলেন, মেহেদী হাসানের পায়ে অনেক ক্ষত রয়েছে। সারা শরীরেও অনেক আঘাতে চিহ্ন আছে।

এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বেপারি বলেন, আমার ভাই কামরুল হোসানের ২টি মোবাইল চুরি হয়েছে। তাই সে মেহেদীকে ধরে জিজ্ঞাসা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে মেহেদী চুরি করার কথা স্বীকার করে। এরপর আমার ভাই ওকে নিয়ে বিভিন্নস্থানে গিয়েও মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি। তবে মেহেদীকে শারীরিক নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। আইনের হাতে তুলে দেয়া উচিত ছিল।’



মন্তব্য চালু নেই