‘মাঠ দখলে ব্যর্থ বিএনপি, সফল আওয়ামী লীগ’

সরকারবিরোধী আন্দোলন করা কিংবা ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে বার বার আওয়ামী লীগের কাছে ‘ধরাশায়ী’ হচ্ছে বিএনপি। সাংগঠনিক দুর্বলতা, দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বে আমলা, ব্যবসায়ী, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা ও তৃণমূল নেতাদের উপেক্ষিত হওয়ায় বিএনপির আজ এই অবস্থা বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করা কিংবা ক্ষমতায় থেকে বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘সফলতা’র কারণ হিসেবে ওই সব রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা সুসংগঠিত, দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বে পোড়খাওয়া নেতা ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলন কীভাবে চাঙ্গা এবং বিরোধী দলের আন্দোলন কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় তা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাই ভাল জানেন বলে দাবি ওই সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকের।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘আন্দোলন করার জন্য পরিস্থিতি এবং পরিবেশ সব সময় এক থাকে না। বিশেষ করে রাজপথের আন্দোলন করতে হলে একটি দলের বা সংগঠনের একটি মজবুত সাংগঠনিক অবস্থা থাকতে হয়। সাংগঠনিকভাবে তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হয়। কিন্তু বিএনপির বর্তমান আন্দোলনে তৃণমূলের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্ক আছে সেটা প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ যে সময় আন্দোলন করেছে সেই পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট এখন আর নেই। আগে কখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করতে দেখা যায়নি। বাহিনীগুলো বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু এখন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। আন্দোলন দমন করতে সরকারি দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে।’

সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি পর্যায়ক্রমে ক্ষমতাসীন হয়- ইতিহাস পর্যালোচনা করে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন করে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে৷ এই আন্দোলনে বাম দলগুলোর ভূমিকাও ছিল উল্লেখ করার মতো।

রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এরশাদ সরকারের পতনের পর সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সাহাবুদ্দীন আহমেদের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সরকার গঠন করে বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ আনেন। বিএনপি সরকার গঠন করার কিছুদিন পর থেকেই বিরোধী দলগুলো সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকে৷

এ সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত করে তোলে আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলো। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দল ছাড়াই নির্বাচন করে বিএনপি। নির্বাচনের পর পরই বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা পায়।

তখনকার আমলা বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে প্রভাবশালী আমলারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসেন। গঠন করেন জনতার মঞ্চ। এতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি সরকার। বাধ্য হয়ে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে।

ওই বছরের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়। নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ঐকমত্যের সরকার গঠন করে। এই সরকারের পাঁচ বছর (১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল) শাসনামলে বিরোধী দলে থাকা বিএনপি রাজপথে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কারণ সরকারবিরোধী হরতাল-অবরোধে রাজপথে সরব ছিল ক্ষমতাসীন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ব্যবহার করে।

পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। সরকার গঠনের পর অভিযোগ ওঠে হাওয়া ভবন থেকে ছায়া সরকার পরিচালনা করতেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমান। বর্তমানে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ভালভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। তরুণসমাজের ভেতরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এমন ঘটনায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ অনেক নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এমনকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করা হয়। সমাবেশে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হন শতাধিক। বর্তমানে এই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং তারেক রহমান আসামী।

বিএনপি সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আন্দোলন করতে থাকে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার মিছিল করে ১৪ দল। সারাদেশে ২০ জন নিহত হয়। এতে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় ১৪ দল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপাতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু তার সঙ্গে মতৈক্য না হওয়ায় চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। তিনি ফের চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন ঘোষণা করেন। এর পর সব উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ২২ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেন। ২৬ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশে সকল রাজনৈতিক কর্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। দুর্নীতির দায়ে শেখ হাসিনা ও খালেদাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষপর্যায়ের ১৭০ জন নেতা গ্রেফতার হন।

দুই বছর ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির ভরাডুবি হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়। এর পর অনির্বাচিত কোনো ব্যক্তি যাতে ক্ষমতাগ্রহণ করতে না পারে সে জন্য সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয় এবং সংসদে তা বিল আকারে উত্থাপন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আনা বিলটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে রায়ে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মতামতও দেওয়া হয়।

ফের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলন করতে থাকে। হরতাল-অবরোধ, ঢাকা ঘেরাও করার পর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু সরকারের ‘দূরদর্শিতা’র কারণে বিরোধী দলের সেই আন্দোলন হালে পানি পায়নি। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু ও কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে জামায়াত সেই ভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপি জোটের আন্দোলনের মুখেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়াই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জোট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এই নির্বাচনে জোটের ১৫৩ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে ২৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় বিএনপি সরকার। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযোজন করা হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আবার ২০০৮ সালে সরকার গঠন করার পর সেই তত্ত্বাধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে ২০১৪ সালে নির্বাচন করে এখন দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এই নির্বাচনে বিএনপি জোট ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি।

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘আন্দোলনে বিএনপির শীর্ষ নেতারা মাঠে নেই এটা সত্য না। তবে রাজধানীতে আমরা নামতে পারছি না এটা সত্য। তার মানে এই নয় যে, আমাদের দেশের প্রতি, দলের প্রতি যথেষ্ট মায়া বা প্রেম নেই। সরকার যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিরোধী দলের ওপর ব্যবহার করছে তাতে সামান্য স্পেস পাওয়া যাচ্ছে না।’

রাজপথের আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম  বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমাদের দলের ওপর কীভাবে অত্যাচার করেছে। বিভিন্ন মামলা দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের হয়রানি করেছে। সরকারের দেওয়া মামলায় আমাদের কোনো নেতা কখনো পলাতক থাকেননি। তারা সব সময় মাঠে থেকেছেন। আমার বিরুদ্ধে বহু মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি গ্রেফতার হয়েছি, জামিনে বের হয়ে আবার আন্দোলনে মাঠে থেকেছি। আমাদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে, আমরা ভয় পাইনি।’

বিএনপি জোট সংলাপ এবং নির্বাচনের দাবিতে এখনো আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। পেট্রোলবোমায় সারাদেশ দগ্ধ হলেও আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না জোট। সরকারের ‘দমন-পীড়ন’ ও গ্রেফতার এড়াতে রাজপথে এখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেকে অন্তরীণ। এখন গোপন আস্তানা থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করছে দলটি।

এদিকে বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করছে বিএনপি।

এ ব্যাপারে এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘আমাদের সময়ও তো তারা (আওয়ামী লীগ) আন্দোলন করেছে। কবে আমরা এভাবে পুলিশ দিয়ে গুলি করিয়েছি? আমাদের দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৯০টি মামলা করা হয়েছে। তারা যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন কি জলিল সাহেবের (আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) নামে এতগুলো মামলা হয়েছে? বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা রয়েছে। কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করামাত্রই নেতাকর্মীদের বিশেষ বাহিনী ফোন করে গুলি করার হুমকি দিচ্ছে। কীভাবে তারা মাঠে নামবে?’

আবার আন্দোলনের নামে বিরোধী দল পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে বলে অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরাও বিরোধী দলে ছিলাম। আমরা পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ মারিনি। রাজপথে আন্দোলন করে পুলিশের হাতে লাঠিপেটা খেয়েছি। কিন্তু আন্দোলন ছেড়ে নাশকতার পথ ধরিনি। বিএনপির উচিত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এখনই সুষ্ঠু রাজনীতিতে ফিরে আসা।’

দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে আন্দোলন দমানো এবং করানোর মাঝে পড়ে নিরীহ জনগণ বলি হচ্ছে বলে সচেতন মানুষ মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি জঙ্গি রাজনীতি যেদিন থেকে শুরু করেছে সেদিন থেকে তাদের রাজনৈতিক অপমৃত্যু শুরু হয়েছে। বিএনপি কখনো রাজপথে আন্দোলন করতে পারেনি। তাদের জন্ম হয়েছিল চোরাপথে। এখনো তারা রাজনীতির চোরাপথ দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়।’

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, ‘কী বিএনপি কী আওয়ামী লীগ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেউই গণতান্ত্রিক আচরণ করছে না। বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে ভিন্ন পন্থায় তা পালনের চেষ্টা করছে। আবার সরকারও অরাজনৈতিক পন্থায় আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। দুই দলেরই কৌশল রাজনৈতিক নয়। বিরোধী দল হরতাল-অবরোধ করবে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারবে। আবার আন্দোলন দমনে সরকারও সক্রিয় থাকবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা দেখা যায়, সেখানে লাঠিচার্জ, জলকামান, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আন্দোলন দমনের নামে যদি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় তাহলে তো সেটা রাজনৈতিক হল না। সবাইকেই রাজনৈতিক আচরণ করতে হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম  বলেন, ‘প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ গুটিকয়েক লোক নিয়ে টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে মহড়া দেয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে বিএনপি মাঠে নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দিয়ে অবৈধ সরকারকে অনাস্থা জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপিসহ ২০ দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে।’ দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই