জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মাঠ গবেষণায় বগুড়া নৃবিজ্ঞান পরিবার

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন ও জাহেদুল ইসলাম : “অনেক প্রাণ এক মন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে হয়ে গেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাঠ গবেষণা -২০১৭। মানুষ ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রায় প্রতি বর্ষে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা থাকে। এবারের মাঠ কর্মে বিভাগের ১ম,২য় ও ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা একসাথে অংশগ্রহণ করে। পূর্ব নির্ধারিত মাঘের প্রথম দিনে কুয়াশা ঢাকা ভোরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমবেত হতে থাকে । ফিল্ড ওয়ার্কের স্থান নির্ধারিত ছিলো প্রাচীন বাংলার রাজধানী খ্যাত পুন্ডনগরের জেলা বগুড়াতে।
ফিল্ড ওয়ার্কের প্রথম দিন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান গেইট থেকে যাত্রা শুরু করে ২২০ কি.মি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুপুর নাগাদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাসের বহর বগুড়া পৌঁছে। বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার আরডিএ ( রোর‌্যাল ডেপ্লাবমেন্ট একাডেমী)শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা হয়। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি সত্ত্বেও বিশ্রামের জো নেই কারো। সমাপ্তির পথে থাকা একাডেমিক শিক্ষাবর্ষে অর্জিত তত্ত্বীয় জ্ঞান মাঠি পর্যায়ে যথাপযুক্ত প্রয়োগই ছিলো শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য। তাই দুপুরের খাবার শেষ করে শিক্ষার্থীরা রওনা দেয় ফিল্ড ওয়ার্কের উদ্দেশ্যে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গবেষণার স্থান ছিলো আরডিএর পাশের ভদ্রপাড়া। ২য় বর্ষের জন্য নির্ধারিত স্থান ছিলো পূর্ব পাশের রামনগর গ্রাম। যেহেতু প্রতি বর্ষের অধ্যয়নরত কোর্স ছিল ভিন্ন তাই গবেষণার স্থান ও বিষয় ছিলো ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করে শেরপুরের গ্রামগুলোতে। কেউ বা বাল্য বিবাহ,স্বাস্থ্য সচেতনতা,মাইগ্রেশন,বিচার ব্যবস্থা,রাজনৈতিক প্রভাব,অবকাঠামো ও শিক্ষা ব্যবস্থা কেউ বা অর্থনীতি আর সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করেন। সার্বিক নির্দেশনায় ছিল কোর্স শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা যখন মাঠে গবেষণা করতেছে তখন কোর্স শিক্ষকরা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন তাদের মাঠ কর্ম। সন্ধ্যায় আরডিএতে ফিরে সংগৃহিত তথ্য নিয়ে আন্তঃগ্রুপ আলোচনা আর কৃত মাঠ কর্মের উপর প্রেজেন্টেশন ছিল রাতের সময়টুকুর কাজ। একই সময়সূচিতে চলে পরের দিনের কাজ। নিজেদের তত্ত্বীয় জ্ঞান ও মাঠ পর্যায়ে গবেষণা এই দুই মিলে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি প্রেজেন্টেশন ছিল প্রাণবন্ত। ফিল্ড ওয়ার্কের শেষদিন বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল নৈশভোজ পরবর্তী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। শেষ দিন সব ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেতে উঠে আরডিএর ডাইনিং হল।
নিজেদের অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবের সাথে মেলানোর এই সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দিত তেমনি শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নিজেদের ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে। কাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের নিবেদিত প্রাণ ফিল্ড ওয়ার্ককে শতভাগ সফল করেছে বলে মন্তব্য করেন বিভাগের চেয়্যারম্যান ড.মির্জা তাসলিমা সুলতানা । বিভাগীয় শিক্ষার্থী উপদেষ্টা অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন,শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সমন্বিত আয়োজন অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীরাও নিজেদের কাজের প্রশংসা পেয়ে শিক্ষার্থীরাও অভিভূত। আরডিএর কর্তপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় কৃতজ্ঞ জাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগ। সর্বশেষে ১৬ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় ুবিশ^বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বগুড়া ত্যাগ করার মাধ্যমে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের শেষ হয়। মাঠ গবেষণা থেকে শারীরিকভঅবে চরেল আসলেও সবাই মন পড়ে আছে মাঠে। আরও কয়েকদিন গবেষণা চালাতে পারলে আরেকটু বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারলে চিন্তাগুলোকে আরেকটু শানিত করা যেতো হয়ত। মাঠ পর্যায়ে গবেষণা না করলে নিজেদের তাত্ত্বিক জ্ঞান যেমন পরিপূর্ণ হয় না তেমনি নিজেদের আগ্রহের জায়গাগুলোকেও খুঁজে পাওয়া যায় না,এই কথাটা সবাই যেন বিদায় বেলায় খুব ভালো ভাবেই বুঝতেছিল। ক্যাম্পাসে ফিরে সবাইকে ফাইনাল গবেষণাপত্র জমা দিতে হবে । গবেষণা পত্র লেখার পাশাপাশি ফেসবুকে নিজেদের মাঠকর্মের এই অভিজ্ঞতা শেযার করতে ভুল করেনি কেউ।



মন্তব্য চালু নেই