মাগুরায় সবজী ক্ষেতে পোঁকা দমনে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরায় সবজী ক্ষেতে পোঁকা দমনে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর ফলে কৃষকরা অনেক কম খরচে বিষ মুক্ত সবজী উৎপাদন করতে পারছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফেরোমন ট্রাফের মাধ্যমে পোকা দমন করে বিষ মুক্ত সবজী চাষ একটি সহজ ও পরিবেশ বন্ধব পদ্ধতি। ফেরোমন স্ত্রী পোকার সেক্স হরমন। রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে তুলার সাহায্যে একটি প্লাস্টিকের বক্সের মধ্যে বসানো হয়। যার নিচে সাবান পানি থাকে। এটিকে লিওর বলা হয়। তৈরিকৃত ফেরমোন ট্রাফের বক্স বাশের লাঠি দিয়ে বেধে সবজী ক্ষেতে স্থাপন করা হয়। এতে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে মারা পড়ে। এর ফলে স্ত্রী পোকার পাড়া ডিমে বংশ বিস্তার হয় না। কৃষকরা এটিকে যাদুর বাক্স বলে।

সাধারণত মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, করলা, পটল, বেগুন, মরিচ, ফুল কাপি, বাঁধা কপিসহ বিভিন্ন সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসডেপ কনসার্ণ ফাউন্ডেশন (ইসিএফ) জেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে। এর বাইরেও কৃষি বিভাগ এ বছর জেলার বিভিন্ন সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ ব্যবহারে কৃষকদের সহযোগিতায় করছে।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় এবারের সবজী মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন সবজী উৎপদন হয়ে থাকে। সব মৌসুমেই কৃষকরা যাতে সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিষ মুক্ত সবজী উৎপাদন করতে পারে এ জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদেরকে ব্যাপক ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ কারনে কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি প্রয়োগের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহারের কারনে কৃষকরা অর্ধেকেরও কম খরচে সবজী উৎপাদন করতে পারছে। পোঁকা দমনে ফেরমোন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহার করতে কৃষকদের বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা । আর কিটনাশক ব্যবহার করে সবজী উপাদন করতে কৃষকের খরচ হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি পরিবেশ বন্ধাব হওয়ায় ভোক্তরা নিরাপদ সবজী পাচ্ছেন।

সদর উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ওহিদ বিশ্বাস বলেন- আমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চার বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া লাগিয়ে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। এতে খরচ কম লাগার পাশপাশি কুমড়া ক্ষেতে পোঁকা দমন করে বিষ মুক্ত সবজী উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি।

বেনিপুর গ্রামের কৃষক মনীমহোন বিশ্বাস ১ একর ২৮ শতক জমিতে করলা ও মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালোভাবে পোকা দমন করে কম খরচে সবজী উৎপাদন করতে পারছেন।

ইসডেপ কনসার্ণ ফাউন্ডশন (ইসিএফ) এর নির্বাহী পরিচালক গাউসুল আলম স্বাধীন বলেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় আমরা কৃষকদের ফেরোমন ট্রাফ পদ্ধতির বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের পাশপাশি বিভিন্ন ধরনের পারমর্শ দিচ্ছি। মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি কমাতে বিষমুক্ত সবজী উৎপাদন করাই এর মুল লক্ষ্য। এবারের সবজী মৌসুমে সদর উপজেলার শ্রীকুন্ডী, জাকরারটেক ও গবিন্দপুর গ্রামের ৫৭ একর মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে বিঘা প্রতি ১৬টি করে ফেরোমন ট্রাফ বক্স বসানো হয়েছে। যা কৃষকদের বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন- ফেরোমন ট্রাফ একটি সহজ ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা পোকা দমন করে বিষ মুক্ত সবজী উৎপাদন করতে পারছে। মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করার ফলে সবজী ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাফ ব্যবহার বাড়ছে। সেই সাথে ক্রেতারা নিরাপদ সবজী ক্রয় করতে পারছেন।



মন্তব্য চালু নেই