মাগুরায় ভুলে ভরা প্রাথমিকের প্রশ্নপত্র, হতাশায় ভুগছে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ভুলে ভরা নিম্নমানের প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও নির্ধারিত বিষয়ের পরিবর্তে অন্য বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলার ৮৪টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী ও ৬ শতাধিক শিক্ষক চরম হতাশায় ভুগছেন।

এ নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীপক কুমার গোস্বামীর বিরুদ্ধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে জেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়েছে। এদিকে ভুলে ভরা প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করায় অভিভাবকরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষকদেরকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটিকে বাদ দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ দায়িত্বে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ৩ আগষ্ট উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণিতে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু যথাসময়ে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশ্ন্পত্র পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে নির্ধারিত পরীক্ষার পরিবর্তে শারীরিক ও সংগীত পরীক্ষা গ্রহণ করেন। ৭ আগষ্ট ধর্ম পরীক্ষার দিনেও প্রশ্ন পত্র প্রতিষ্ঠানে না পৌঁছানোর কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বিনা নোটিশে হঠাৎ মোবাইলের ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জুলফিকার আলী অভিযোগ করে বলেন, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ৩ আগষ্ট ইংরেজি পরীক্ষার হওয়ার কথা থাকলেও তা গ্রহণ না করে শারীরিক ও সংগীত পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। এছাড়া ৭ আগষ্ট ধর্ম পরীক্ষার দিনেও প্রশ্নপত্র প্রতিষ্ঠানে না পৌঁছানোর কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় হাজির হয়ে পরীক্ষা দিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যায়। পরে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাইলের ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীতে তড়িঘড়ি করে যে সকল বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে তাও অসংখ্য ভুলে ভরা। এসব ত্র“টিপূর্ণ প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রে অসংখ্য বানান ভুল রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নপত্রের প্রথম প্রদত্ত অনুচ্ছেদে বৃটিশ-এর পরিবর্তে বৃষ্টিশ, ডিএসসি’র পরিবর্তে ডিএমসি, জগদীশ চন্দ্র বসুর পরিবর্তে জগদশি লিখা রয়েছে। একই প্রশ্নে ৬ নং প্রশ্নের ক নং প্রশ্নে ভারসাম্য-এর পরিবর্তে ভারসাম্য লিখা আছে। ১০ নং প্রশ্নে এক কথায় প্রকাশে ‘উচু নীচত নয় এমন’ বলে একটি ভুল প্রশ্ন আছে। তাছাড়া ১৫ নং প্রশ্নে রচনা লিখতে বলা হয়েছে স্যার জগদশি চন্দ্র বসুকে নিয়ে। প্রকৃত পক্ষে জগদশি না হয়ে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু হবে। পঞ্চম শ্রেণির গণিত প্রশ্নে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৮৮ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়েছে। এখানে ১০ নং প্রশ্নটি ছাপানোই হয়নি। ১৫ নং প্রশ্নে চতুর্ভুজটি কোন ধরনের? বলে একটি প্রশ্ন থাকলেও প্রশ্নপত্রে চতুর্ভুজটির চিত্র আঁকা হয়নি। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা প্রশ্নেও রয়েছে। এখানে প্রথমেই প্রদত্ত অনুচ্ছেদে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটির পরিবর্তে ‘বঙ্গন্ধু’ লিখা আছে। ১ নং প্রশ্নের ২ নং প্রশ্নে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘মুক্তিযুক্ত’ এবং ৩ নং প্রশ্নে ‘সকলে’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সকরে’ লিখা রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির বাংলা প্রশ্নপত্রে ৪ নং প্রশ্নে প্রদত্ত অনুচ্ছেদে ‘পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই ২০০৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন’-বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সাল হবে। এই অনুচ্ছেদে সালে লিখতে গিয়ে ‘সারে’ এবং ‘অগ্রসর’ এর পরিবর্তে ‘অগ্রসহ’ লিখা আছে।

এসব ভুলের বিষয়ে অভিভাবকরা শিক্ষকদের অবগত করলেও শিক্ষকরা কোন মতামত প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, একমাত্র শিক্ষা কর্মকর্তার উদাসিনতার কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তার এহেন কর্মকাণ্ডে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদেরকে অভিভাবকবৃন্দের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীপক কুমার গোস্বামী বলেন, প্রেসের কারণে এমন ভুল হয়েছে তবে প্র“ফ কপি না ছাপিয়ে ভুলক্রমে পূর্বের কম্পোজ কপি ছাপানোর কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। আমার নিকট বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ আসার পর বিষয়টির আমি প্রমাণ ও যাচাই-বাচাই করার জন্য জেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এডিপিও)কে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই