মাগুরায় ব্যবসায়িদের প্রতি কৃষকদের ক্ষোভ প্রকাশ

মাগুরা প্রতিনিধি: এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হয় ৮ মন। এ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এ হিসেবে বিঘা প্রতি কৃষকের গড় লোকসান হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। ব্যাসায়িদের সিন্ডিকেটের কারনেই কৃষকদের এই লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ করনে মাগুরা সদর উপজেলার নরসিংহাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ।

মাগুরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি বিষয়ক মত বিনিময় সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন ।

শ্রীপুর উপজেলার মহিষাখোলা গ্রামের কৃষক আহমদ আলী অভিযোগ করেন বাজারে পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেক কৃষকই পাট বিক্রি করতে এসে তা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। একই ভাবে সভায় অংশ নেয়া অনেক কৃষকই অভিযোগ করেন উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রতিমন পাটে তাদের ৩‘শ থেকে ৪‘শ টাকা লোকসান হচ্ছে ।

সরকারি দৌতপুর জুট মিলের সহকারি পাট ক্রয় কর্মকর্তা মিঠুন বিশ্বাস ও প্লাটিনাম জুট মিলের পাট ক্রয় কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, বর্তামানে সরকারিভাবে পাটের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯৩০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু ব্যবসায়িরা কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা হাওে পাট ক্রয় করছেন এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এতে করে কৃষকের মন প্রতি লোকসান হচ্ছে ৪৮০ থেকে থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত।

অন্যদিকে ব্যবসায়িরা জানান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কেনা হচ্ছে বিষয়টি ঠিক নয়। ব্যবসায়িদের কাছ থেকে সরকারি জুট মিলগুলো মাত্র ২৫ শতাংশ পাট ক্রয় করে। বাকি ৭৫ শতাংশ পাট ক্রয় করে বে-সরকারি জুট মিলগুলো। সরকারি ক্রয় রেটের পাশপাশি বে-সরকারি জুটমিলগুলোতে পাট সরবরাহের বিষয়টিও তাদের দেখতে হয়। এ ছাড়া সরকারি মিলগুলোর কাছে ব্যবসায়িদের মোট অংকের বকেয়া টাকা পাওনা রয়েছে। এ ছাড়া মাথার উপর রয়েছে ব্যাংক ঋনের বোঝা। একারনে তারা দেনার দায়ে জর্জরিত। এসব মিলিয়ে ব্যবসায়িরাও পাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে।

মাগুরা নতুন বাজার পাট ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ আছাদুজ্জামান জানান, পাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষকরা যাতে লোকশানের সম্মুখিন না হন সে দিকে তাদের দৃষ্টি রয়েছে। তবে সরকারি বে-সরকারি জুট মিল মালিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিলে পাটের মূল্য নির্ধারণ করলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থকে বঞ্চিত হবেন না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করে কৃষকদের কাছ থেকে পাট ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়িদের প্রতি জোরালো আহবান জানান।

সভায় জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমানের সভাতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসেক (সার্বিক) আজমল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কালা চাঁদ সিংহ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা, পাট অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের সহকারি পরিচালক মিজানুর রহমান, জেলা পাট উন্নয়ন কর্তকর্তা আক্তার হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মিরুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম দীপু প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই