মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে ছেলের জবানবন্দি

বড় ভাইয়ের শালিকাকে বিয়ে করতে ব্যর্থ হওয়ায় মা জয়নব বেগমকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ছেলে মো. আলী। সোমবার চট্টগ্রামের চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মুহাম্মদ রেজার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

১৩ দিন আগে (১৩ জুলাই) দুই সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের মাকে হত্যা করে বলেও জানান মো. আলী। হত্যার ১২ দিনের মাথায় (সোমবার) ভূজপুর থানা পুলিশ মায়ের হত্যাকারী সন্দেহে ছেলে মো. আলীকে আটক করে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো অস্ত্রও (দা) উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভূজপুর থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি দুজনকে আটকের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্তে কাজ শুরু করে পুলিশ।

নিজের মাকে হত্যার সময় তার ছোট খালার প্রেমিক মো. হোসেন ও আবদুর রহীম নামে স্থানীয় এক যুবক সহযোগিতা করেছিল বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে মো. আলী। তারা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে ভূজপুর থানার পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই দিবাগত রাতে ভূজপুর থানার ১নং বাগান বাজার ইউনিয়নের মতিন নগর গ্রামের মৃত খুরশিদ মিয়ার স্ত্রী জয়নব বেগম ওরফে জগুন বিবিকে (৫৩) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এঘটনার পর নিহতের বড়ছেলে জালাল উদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামি করে ভূজপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে দিন পনের আগে বৃদ্ধা জয়নব বেগম তাকে খুন করা হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে।

ভূজপুর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন জানান, মতিননগরের মৃত খুরশিদ মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বিধবা জয়নব বেগমকে বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় সংসারে মো. আলী নামে এক ছেলে রয়েছে। আর জয়নব বেগমের প্রথম সংসারে এক ছেলে জালাল উদ্দিনসহ মতিননগর এলাকায় তার পৈত্রিক বাড়িতে বসত করতো। এই বয়ষ্ক নারীর হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটন করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কারণ হত্যাকারী নিজেই তার মা খুন হওয়ার খবর সকালে সবাইকে দেয়। মরদেহ নিয়ে থানায় যায়। থানায় সে প্রথমে মামলার বাদি হতে মত দিলেও পরে অসম্মতি জানায়।

ঘটনার দিন থানায় মো. আলীকে একেবারেই স্বাভাবিক দেখা গিয়েছিল। পরে মামলার এজাহার পরিবর্তন করে তার ভাই জালাল উদ্দিনকে বাদি করে ভুজপুর থানার মামলা নং ৭ তাং ১৪/৭/১৬ ধারা ৩০২/৩৪ দ:বি: রুজু করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

এর মধ্যে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বড় ভাই জালাল উদ্দিনের শালিকাকে বিয়ে করতে চায় মো. আলী। কিন্তু জয়নব বেগম এতে রাজী না হওয়ায় মা-ছেলের মধ্যে ঝগড়া হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে ধারণা করে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যে ধারালো দা উদ্ধার করেছে, এমন একটি ধারালো দা নিয়ে আগের দিন মো. আলীকে এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

অপরদিকে নিহত জয়নব বেগমের ছোট বোন কমলা বিবির সঙ্গে স্থানীয় হোসেন ওরফে হোসাইন্যা নামে এক ব্যক্তির পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কমলা বিবি সৌদি আরবে নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। তাদের এ অবৈধ সম্পর্কের টানে সে সৌদি থেকে কমলা বিবিকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করে। দেশে এসে অবৈধ মেলামেশা শুরু করে। এতেও বাধা দেন জয়নব বেগম। পরে হোসেইন্যা কমলা বিবিকে বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতো। শশুর বাড়ির সম্পত্তি নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এসব কারণে হোসাইন্যা ক্ষুদ্ধ হয়ে জয়নব বেগমকে হুমকি-ধমকি দেয়।

এসকল কারণে জয়নব বেগম বিষয়টি বাগান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুস্তম আলীকে অবহিত করেছিলেন।

ভূজপুর থানার এ উপ-পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ঘটনার পর ত্রি-মুখী এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ভূজপুর থানার একটি চৌকস টিম অনুসন্ধান শুরু করে। এর মধ্যে হোসাইন্যা ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। প্রথমে তার মুঠোফোন খোলা থাকলেও পরে বন্ধ পাওয়া যায়। খুব কৌশলে ছোট ছেলে মো. আলীর গতিবধি, আচার আচরণ বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ওই টিম। এর মধ্যে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেই তার মায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত।

ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী বলেন, গত রোববার রাতে বাগান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিহত জয়নবের ছোট ছেলেকে আটক করা হয়। রাতভর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে সে।

তার স্বীকারোক্তি মতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো একটি দা ঘর থেকে ২০ গজ দূরে পরিত্যক্ত একটি টয়লেটের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এরপর সোমবার চট্টগ্রাম আদালতের চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মুহাম্মদ রেজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। এতে তার ছোট খালার স্বামী হোসেন ওরফে হোসাইন্যা, স্থানীয় আরেক সহযোগী জনৈক আবদুর রহিমসহ ৩ জন মিলে ঘটনার দিন রাত ১২টার পরে জয়নাব বেগমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে বলে স্বীকার করে।



মন্তব্য চালু নেই