ঈদে ৩ কন্যাকে নতুন পোশাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী

‘মা’কে ঘিরে সেই ৩ কন্যার ভালো লাগার স্মৃতি

গণভবন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। সেখানকার বাগানে সবুজ ঘাস মাড়িয়ে হাঁটছে তিন মেয়ে। সঙ্গে তাদের সন্তান আর স্বামীরা। নিজেদের মধ্যে নীচু কণ্ঠে চলছে নানা কথা।

এই গণভবনেই বিয়ে হয়েছিল তাদের। কিন্তু এতো বছর পরও সেই কথা যেন বিশ্বাস করতে পারেন না। সবই যেন স্বপ্নের মতো! এসবই বলাবলি করছিলেন তারা। এ সময় গণভবনের ভেতর থেকে ডাক এলো। তাদের মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকছেন। ছুটে গেলেন সবাই। পরম মমতায় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে কাছে ডেকে নিলেন। খোঁজ নিলেন সবার। আদর করলের তাদের সন্তানদেরও।

গত ১১ জুলাই শনিবারের কথা এটা। এর আগে সেইদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী তার ৩ কন্যা, তাদের সন্তান এবং স্বামীদের জন্য ঈদের পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর বিকেলে তাদের সবাইকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠান।

মা ডেকেছেন- আর কি না যেয়ে থাকা যায়। তার উপর আবার প্রধানমন্ত্রী! নির্দিষ্ট দিনে এবং সময়ে রুনা, রত্না আর শান্তা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে তাদের গাড়িতেই পৌঁছে যান গণভবনে।

মঙ্গলবার সকালে পুরান ঢাকায় রুনা তার বাসায় বসে যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল চোখ-মুখ। তিনি জানান, তাদের মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়মিত তিন মেয়ের খোঁজ খবর নেন। প্রতি বছরের মতো এবারও জুন মাসে তাদের বাসায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল পাঠিয়েছিলেন তিনি।

রুনা জানান, প্রতি বছরই ঈদের সময় প্রধানমন্ত্রী (তাদের মা) তাদের জন্য উপহার (নতুন পোশাক) পাঠান এবং তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার একটু দেরি হয়েছে। অন্যান্য সময় ৫ থেকে ১০ রোজার মধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠান। কিন্তু এবার রোজার শেষের দিকে তার সঙ্গে দেখা হলো।

গত ১১ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য ঈদের পোশাক পাঠান। পোশাকের মধ্যে ছিল তিন কন্যার জন্য শাড়ি এবং থ্রি পিস। বাচ্চাদের জন্য দুই সেট করে কাপড় এবং স্বামীদের জন্য পাঞ্জাবি। তবে গণভবনে মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে তাদের খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। কারণ সেদিন গণভবনে অনেক লোক ছিল। আর সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই মা তার সন্তানদের খোঁজ নিয়েছেন। এমনকি এক সঙ্গে ছবি তোলার সময় রুনার স্বামী জামিলকে দেখতে না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে এনে সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেন। ঈদের দিনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের দেখা হবে বলে জানান রুনা।

রুনা আরো জানান, তারা একবার তিন বোন মিলে তাদের মাকে (প্রধানমন্ত্রী) এক ঈদে শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। এরপর আর কখনো দেয়া হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে রুনা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দুই সন্তানের (ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল) সঙ্গে তাদের কখনোই দেখা হয়নি।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩, নবাব কাটরা ৫ তলা বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় কয়েকটি পরিবার। বাড়ির নীচে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়ে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রুনার বিয়ের ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের দিন এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা, সাকিনা আক্তার রত্না ও আসমা আক্তার শান্তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকে টেনে নেন। ঘোষণা দেন তারা তার নিজের সন্তান। এরপরই গণভবনে নিজে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী তার তিন কন্যার বিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ৩ কন্যার ঘড়ে এখন চার নাতি-নাতনী। এদের একজনের নাম আলী মর্তুজা আযান, দ্বিতীয় জন শ্রদ্ধা, তৃতীয় রমাদান এবং চতুর্থ আদর।

চাঁনখার পুলের হোসনী দালান রোডের ১৮/১০, শিয়া গলির বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন প্রধানমন্ত্রীর বড় মেয়ে উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা।

রুনার স্বামী সৈয়দ রাশেদ হোসাইন জামিল জানান, বিয়ের সময় তার মা (প্রধানমন্ত্রী) তাকে একটি চাকরি দেয়ার কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌ বাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন সংসার ভালোই চলছে।

প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় মেয়ে সাকিনা আক্তার রত্না জানান, এখনো সেই দিনের কথা বার বার মনে পড়ে। তখন কেউ দেখার ছিল না। গণভবনে বিয়ের পর মায়ের নির্দেশে তার স্বামী সাইদুর রহমান সুমনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দেয়া হয়। এখন তারা ১৬/৫, নবাব বাগিচায় থাকছেন। তাদের ঘরে মেয়ে সন্তান শ্রদ্ধার আগমন ঘটে। এখন শ্রদ্ধাকে নিয়েই তাদের সময় কাটছে।

প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় মেয়ে আসমা আক্তার শান্তা জানান, গণভবনে বিয়ের পর তার মা (প্রধানমন্ত্রী) স্বামী আলমগীর হোসেনকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন তারা পুরান ঢাকার আগা সাদেক লেনের ৯৬/১, একতা নিবাসের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন।

আপন মা যেমন জামাই বাড়ি গ্রীষ্মের ফল পাঠান, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীও তাদের তিনবোনের বাসায় প্রত্যেকবার ফল পাঠান। সরাসরি বছরে একবার দেখা হলেও শত ব্যস্ততায় বিভিন্ন উৎসবে নিয়মিতই খোঁজ নেন তাদের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা তাদের তিন বোনের উকিল বাবা হাজী সেলিম এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা এমএ আজিজ তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন। আপন মেয়ের মতো সব ভালোমন্দ দেখেন তারা।



মন্তব্য চালু নেই