মহানবী (সা.) এর আমলের বাংলাদেশে নির্মিত যে মসজিদ! জানুন অলৌকিক কাহিনি!

বর্তমান বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় আনুমানিক ৬২০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল। যার প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন ইসলামিক গবেষণার মাধ্যমে।

লাল মনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের “মজেদের আড়া” নামক জঙ্গলে ১৯৮৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রাচীন একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। জঙ্গলটি খনন করে একটি ইট পাওয়া যায়। এতে কালেমা তায়্যিবা ও ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে। হিজরি ৬৯ অর্থ হলো ৬৯০ খ্রিস্টাব্দ।

রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ হতে জানা যায়, রাসূল (সা.)-এর মামা বিবি আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০-৬২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন যে, ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের মসজিদটি আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেন।

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও প্রাচীন এই মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ২১ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০ ফুট। মসজিদের ভিতরের পুরুত্ব সাড়ে ৪ ফুট। মসজিদে চার কোণে অষ্টকোণ বিশিষ্ট স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ হতে পাওয়া যায় গম্বুজ ও মিনারের চূড়া (রংপুর জেলার ইতিহাস, পৃ. ১৬৪)। মতিউর রহমান বসনীয়া রচিত রংপুরে দ্বিনী দাওয়াত গ্রন্থেও মসজিদের এ মসজিদের বিশদ বিবরণ রয়েছে।

লাল মনিরহাট জেলার এ প্রাচীন মসজিদ ও এর শিলালিপি দেখে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের (১২০৪ খ্রি.) ছয়শ’ বছর আগেই বাংলা অঞ্চলে সাহাবী (রা.) দ্বারা ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল।।

অলৌকিক কাহিনিঃ
ওই ঘটনার পর তখনো মজদের আড়ায় নামাজ পড়া শুরু হয়নি। এক রাতে আফছার আলী শুনতে পান একজন বলছেন (কণ্ঠটা ঠিক তাঁর ভায়রা নওয়াব আলীর মতো) চলো, আমরা মজদের আড়ায় নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার জন্য তিনি বেরিয়েও পড়েন। একসময় পৌঁছে যান ভায়রার বাড়িতে। অপেক্ষা করেন, কিন্তু ভায়রা আর ভেতর থেকে বের হন না। পরে ডাকাডাকি শুরু করেন এবং বলেন নামাজ পড়ার জন্য ডেকে নিয়ে এসে তুমি আর বেরোচ্ছ না কেন? এ কথা শুনে নওয়াব আলী তাজ্জব বনে যান। ঘটনাটা এলাকায় জানাজানি হলে, সবাই মিলে ওই দিন থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেন। এলাকাবাসীর মতে, সেটা ’৮৬ সালের ঘটনা, ওই দিন ছিল মহররমের ১০ তারিখ। পরবর্তী সময়ে এখানেই নির্মাণ করা হয় হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স এবং একটি নূরানী মাদ্রাসা।

উল্লেখ্য, এর আগে এলাকাবাসী নামাজ পড়ত তিন কিলোমিটার দূরের সুবেদার মুনছুর খাঁ নিদাঁড়িয়া মসজিদে, যা একই ইউনিয়নের নয়ারহাট পাড়ায় অবস্থিত। এই মসজিদটি মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে। অবশ্য এটিও দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। স্থানীয় লোকজন গরু খুঁজতে গিয়ে এই মসজিদটি জঙ্গলের ভেতর খুঁজে পায়। অবশ্য এলাকাবাসী তারও আগে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার দূরের রতিপুরের কেরামতিয়া বড় মসজিদে নামাজ পড়তে যেত।

আড়া বর্তমানের হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যে স্থানে অবস্থিত, সেই স্থানটি একদা পরিচিত ছিল মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া নামে। স্থানীয় অধিবাসী দেলওয়ার হোসেন জানান, স্থানটি টিলার মতো ছিল। ওখানে কেউ যেত না। তবে অনেকেই আগরবাতি, মোমবাতি, ফুল, ধুপ ইত্যাদি ওই স্থানে রেখে আসত। এখানে মসজিদ, মন্দির না অন্য কিছু আছে কিছুই জানত না তারা। উল্লেখ্য, স্থানীয় ভাষায় আড়া শব্দের অর্থ হলো জঙ্গলময় স্থান। দীর্ঘদিনের পতিত এই জঙ্গলে স্থানীয় লোকজন হিংস্র জীবজন্তু, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করত না।

টিম স্টিলকে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে সংরক্ষিত হারানো মসজিদের অংশবিশেষ দেখাচ্ছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি জানা যায়, রামদাস এলাকায় বর্তমানে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের পূর্ব পুরুষরা ২০০ বছর আগে এখানে বসতি শুরু করেন। হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যা আগে আড়া নামে পরিচিত ছিল, তার একদা মালিক ছিলেন পচা দালাল। তাঁর কাছে থেকে কিনে নেন ইয়াকুব আলী। আনুমানিক সময়কাল ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গাটির মালিক হন নবাব আলী। হারানো মসজিদ আবিষ্কারের পর তিনি জায়গাটা হারানো মসজিদ কমপ্লেক্সের নামে দিয়ে দেন।



মন্তব্য চালু নেই