মহাদুর্নীতিতে মেতেছেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি

মহাদুর্নীতিতে মেতেছেন মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান-উজ-জামান। গোটা ব্যাংকজুরে গড়ে তুলেছেন তার একক কর্তৃত্ব। বানিয়েছেন তার অধিনস্থ পাঁচ খলিফা। আর এসব দিয়ে গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদ।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব দুর্নীতি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাই তার বিরুদ্ধে সম্পদ দাখিলের নোটিশের সুপারিশ করে প্রাথমিক অনুসন্ধানের এই অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে যাচ্ছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম।

দুদক সূত্র জানায়, মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান-উজ-জামানের বিরুদ্ধে প্রথমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ এলে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে তাকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে (এমটিবি) ডিএমডি পদে যোগদান করেন মো. আহসান-উজ-জামান। এর আগে তিনি নিউইয়র্কের ব্যাংক অব আমেরিকাতে কাজ করেছেন। ২০১১ সালে এসে এমটিবি ব্যাংকে তার অ্যাডিশনাল এমডি হিসেবে পদন্নতি হয়। সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর মিডল্যান্ড ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ২০১৪ সালে যোগদান করেন তিনি। এমটিবি ব্যাংকে থাকাকালীন তার একক আধিপত্য বিস্তারের অসাধু চেষ্টা বোর্ড অফ ডিরেক্টর বুঝতে পারলে, সেখান থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে জানা যায়। এরপর মিডল্যান্ড ব্যাংকে এসেও সেই অবৈধ একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লেগে আছেন।

ব্যাংকের চারটি মূল বিভাগ যেমন অপারেশন, আইটি, এডিসি কার্ডস এবং পিআরও (জনসংযোগ) নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। তার পছন্দের ব্যক্তিকে এসব জায়গায় বসিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একক কর্তৃত্ব। এর মধ্যে ক্বাফী নামে তার এক পিএসকে এই চারটি বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন। একইভাবে মনিরুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তাকে ক্রেডিট ও এইচআর (হিউম্যান রিসোর্চ) এ প্রধান করে রেখেছেন। অথচ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী কোনো কর্মকর্তাকে ইন্টারনাল বিভাগের দায়িত্ব দিলে তাকে আর এক্সটার্নাল বিভাগে দায়িত্ব দেয়া হয় না। কিন্তু তিনি পছন্দের একই ব্যক্তিকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে রাখছেন।

এ দু’জন ছাড়াও তার পছন্দের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহম্মেদ, হাসানুল হক ও দিদারুল ইসলামের নাম আসে। তারা এমডির ছত্রছায়ায় ‍বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। এছাড়া ব্যাংকের মধ্যে এই পাঁচজন ব্যক্তি ওই এমডির পাঁচ খলিফা বলে পরিচিত। তাদের দিয়েই পুরো ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া তার একক সিদ্ধান্তে মিডল্যান্ড ব্যাংকের উত্তরা শাখা বেশি টাকা দিয়ে তার বন্ধুর বাড়িতে স্থানান্তর করেছেন। যার ফলে অতিরিক্ত ব্যায় গুণতে হয় ব্যাংকে।

দুদকের অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, আহসান-উজ-জামানের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ৮৭টি ফিক্সড ডিপোজিট রিসিড (এফডিআর) আছে ও ১২টি সাধারণ হিসাব নম্বর আছে। এসব হিসাব নম্বর দিয়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা, যা অস্বাভাবিক বলে দুদকের কাছে মনে হয়। এছাড়া এনআরবি গ্লোবার ইন্স্যুরেন্সে তার শেয়ার ও মালিকানা আছে। অথচ ব্যাংকের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা অন্যকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারবেন না।

শুধু তাই নয় ঢাকায় তিনটি বাড়ি ও তিনটা গাড়ি আছে মো. আহসান-উজ-জামানের। এগুলোর মধ্যে গুলশানের ৩৫ নম্বর রোডে (হাউস নং-৩/এ) ১০ কাঠার প্লট, একই এলাকায় এক বিঘা জমি। ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডে ১ বিঘা জমি এবং তার ওপর বাড়ি রয়েছে এই কর্মকর্তার।

একই সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনার মধ্যেও তার উদাসিনতা দেখা গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। ২০১৪ সালের তার ওই ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিট রিপোর্টে এইচআর বিভাগের কিছু সত্য গোপন করেছেন বলে দেখা যায়। সেই প্রতিবেদনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য আপডেট নেই। সেখানে দেখা যায়, ইমপ্লয়ি নম্বর ১৭১, ১৭৩, ১৭৫, ১৭৯. ১৮০, ১৮১. ১৮২ এবং ১৮৩ কোনো সাপ্তাহিক স্বাক্ষর নেই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি আহসান-উজ-জামানের বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার নামে যেসব পরিমান সম্পদের তথ্য পেয়েছি, তা দুদকের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে। তাই আরো অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য শিগগিরই তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের সুপারিশ করে এসব অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিবেন অনুসন্ধানী কর্মকর্তা। আর কমিশন অনুমোদন দিলেই তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেবেন তিনি।’

তবে এসব বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই