মন্দিরে নরমুণ্ডর বিকল্প হিসেবে ফাটানো হয় নারিকেল?

কাশ্মীরের চাপা টেনশনে ভরা পরিবেশেও মন্দিরে নারিকেল নিয়ে যেতে ভোলেনি মণিরত্নমের নায়িকা‚ রোজা। কে ভুলতে পারে‚ সেই সিকোয়েন্স‚ যেখানে নিস্তব্ধ মন্দিরে রোজার হাতে নারিকেল ফাটানোর শব্দে ছুটে এসেছিল অস্ত্রধারী সেনারা! দক্ষিণী পরিচালক মণিরত্নম যে দেবতার উপাসনা নারকেল ছাড়া ভাবতে পারবেন না‚ সে তো খুবই স্বাভাবিক।

আঞ্চলিক ভাবে যে জিনিসের প্রাচুর্য থাকে‚ সেটাই হয়ে যায় দেবতার প্রসাদ। তাই‚ উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণের মন্দিরে নারকেলের প্রচলন অনেক বেশি। নারকেল গাছও খুবই পবিত্র সেখানে। উত্তর ভারতে যেমন নিম গাছ‚ বেল গাছ বা অশ্বত্থ গাছ পবিত্র‚ দক্ষিণ ভারতে সেরকমই নারকেল গাছ। সেখানে নারকেল গাছ কাটার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অনেক সংস্কার।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী‚ নারকেল সৃষ্টি করেছিলেন বিশ্বামিত্র মুনি। একে শ্রীফল এবং মহাফল বলেও ডাকা হয়। পুজোর ডালা‚ তোরণ‚ ডাবরূপে ঘটে…কোথায় নেই নারকেলের উপস্থিতি! যে কোনও শুভ সূত্রপাতের আগে নারকেল ফাটানো তো হিন্দু রীতিনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

নারকেল গাছের প্রতিটা অংশই মানুষের নানা ভাবে কাজ লাগে। আর প্রয়োজনীয় যে কোনও জিনিসের গায়ে ‘পবিত্র’ তকমা দিয়ে তাকে সংরক্ষণ করা তো প্রচলিত রীতি। কিন্তু প্রসাদ নয় বোঝা গেল। মন্দিরে দেবতার সামনে নারকেল ফাটানোর তাৎপর্য কী? অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন‚ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নরবলির প্রাচীন রীতি।

হত্যাপরাধ এবং বর্বরতার কারণে নরবলি নিষিদ্ধ। কিন্তু তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় নারিকেল। মানুষের মাথার সঙ্গে এই ফলটির সাদৃশ্যই এই বিকল্পের নেপথ্য-কারণ। প্রাচীন স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ ভাষায় ‘কোকো’মানে মানুষের মাথা। সেখান থেকেই ‘কোকোনাট’ শব্দের জন্ম। নারিকেলের ‘চোখ’-এর জন্যেও ধরে নেওয়া হয়‚ এটা আসলে নরমুণ্ডের প্রতীক। পাশাপাশি বলা হয়‚ নারিকেল ফাটানো মানে নিজের অহঙ্কারকে ঈশ্বরের সামনে বিসর্জন দেওয়া।

হিন্দুদের কাছে এহেন পবিত্র নারকেলের জন্মস্থান নিয়ে আছে বহু বিতর্ক। একদল উদ্ভিদবিজ্ঞানী মনে করেন নারকেলের আদি বাসভূমি আমেরিকা। আবার অন্যদলের বিশ্বাস‚ ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকাই নারকেলের উৎসস্থল। যেখানেই জন্ম হোক না কেন‚ নারিকেল যে প্রকৃতির বিস্ময়‚ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। উপকূলীয় নোনতা মাটিতে জন্মে‚ নোনতা জলে লালিতপালিত হয়েও এই ফল নিজের মধ্যে ধারণ করে মিষ্টি পানি। তাই‚ সহজেই এই ফল হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী উর্বরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবমিলিয়ে‚ উপকূলীয় ভারতে জনজীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে নারকেল ওরফে নারিয়েল ওরফে তেঙ্গা।



মন্তব্য চালু নেই