মন্ত্রিপরিষদ থেকে লতিফকে অপসারণ

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রোববার দুপুরের দিকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় বলে জানা গেছে। নানান সমালোচনার মুখে অবশেষে মন্ত্রীত্ব হারালেন লতিফ সিদ্দিকী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ওই সাক্ষাতে লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের বিষয়টি মূলত স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর শেষে রোববার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
আরো আগেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হলেও রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব হজে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। হজ পালন শেষে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দানসংক্রান্ত ফাইলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্বের অবসান ঘটলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এর আগেই এ-সংক্রান্ত ফাইল তৈরি করে রাখা হয়। লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণে সংবিধানের ৫৮(২) ধারা অনুসরণ করা হয়েছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত রূপদানের জন্য শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খোলা রাখা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইলবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রিপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ও সাংবাদিকদের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
হজ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যের পর স্থানীয় প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সংবাদটি দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কেই ছিলেন। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে যান। সেখানে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখেন এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তার এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের ভিতরেও তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে সিলেটে যাত্রাবিরতিতে বিমানবন্দরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (লতিফ সিদ্দিকী) সরকার ও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করতে হলে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকতে হবে। দলের পদ থেকে কাউকে বাদ দিতে হলে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলা গ্রহণযোগ্য নয়। যা বলেছি তা করবো। আশা করি, এ ব্যাপারে দলের সবাই একমত হবেন।’
উল্লেখ্য, ২৮ সেপেন্টম্বর নিউইয়র্কে হজ, তাবলীগ জামাত এবং দলের ভবিষ্যৎ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে দেশে ও দেশের বাইরে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ব্যাপক বিতর্কিত হন।
ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
বিরোধীরা তার গ্রেপ্তার ও পদত্যাগ দাবি করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২ ডজন মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কেই ছিলেন। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীও তার সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে যান। সেখানে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখেন এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পরে দেশে ফিরে ওসমানী বিমানবন্দরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (লতিফ সিদ্দিকী) সরকার ও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
হজ পালনের পর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। মন্ত্রীকে অব্যাহতি তার মাধ্যমেই হয়। আর তার প্রজ্ঞাপন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

যা বলেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী:
গত রোববার বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন লতিফ সিদ্দিকী।
এসময় তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করলো এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে? তারাতো ছিল ডাকাত। তখন সে একটা ব্যবস্থা করলো যে আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী, জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী, তবে তার চেয়েও বেশি হজ ও তাবলিগ জামাতের।’
হজ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, ‘হজের জন্য ২০ লাখ লোক সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’
এ সময় তাবলীগ জামাতের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘তাবলিগ জামায়াত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদেরতো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়েও সমালোচনাও করেন মন্ত্রী। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই’ কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।’



মন্তব্য চালু নেই