মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ আমাদের সরকার নিয়েছে। সারাদেশে আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করছে সরকার।

তিনি বলেন, বিনিয়োগে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, তবে আপনাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আপনারা বিনিয়োগ করুন এবং সর্বোচ্চ লাভ আপনারা তুলে নেন সে প্রত্যাশা আমাদেরও।

আজ রবিবার সকালে রজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট-২০১৬’ সম্মেলনের উদ্বোধানী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীও বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই এবং এই লক্ষ্য পূরণে সবার সহযোগিতা দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও উন্নত দেশগুলোতে মন্দাসহ সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু ধরেই রাখেনি, ক্রমাগতভাবে তা এগিয়েও নিয়ে গেছে।

‘গত অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক পাঁচ-এক শতাংশ। আগের পাঁচ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আমরা চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। অর্থবছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যথেষ্ট আশাবাদী।

তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের দক্ষতা বেড়েছে, মনোবল বেড়েছে উদ্যোক্তাদেরও। আমাদের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সাহসী উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তা সক্ষমতারই পরিচয় বহন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ছয় বছরে বাজেটের আকার প্রায় ৫ গুণ বেড়ে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ পৌনে আট গুণ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

দেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বের ৪৫তম ও ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে বলেও জানান তিনি।

বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময়ই বলে থাকি সরকার ব্যবসা করবে না, ব্যবসা করবেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেবে। আমরা তাই করছি। বিগত কয়েক বছরে অবকাঠামো ও নিয়ম-নীতির ব্যাপক সংস্কার করে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি।

এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অপরিহার্য উপাদান। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২০০৬ সালের ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে দুই হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

‘ভবিষ্যতে গ্যাসের ঘাটতি মেটানোর জন্য এলএনজি আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণেরও কাজ চলছে’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান প্রধান বৈদেশিক বিনিয়োগ খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, স্বাস্থ্যসেবা, ঔষধশিল্প, সমুদ্রবন্দর, শিল্পোৎপাদন, হালকা প্রকৌশল, অটোমোবাইল, সিরামিকস, টেক্সটাইল, চামড়া এবং চামড়া-জাত শিল্প, আইসিটি, বিভিন্ন সেবাসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো উল্লেখযোগ্য।

সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে রাজস্ব ও রাজস্ব-বহির্ভূত আকর্ষণীয় প্রণোদনা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিনোযোগকারীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনাদের (বিনোয়োগকারী) সক্রিয় অংশীদার হওয়ার এখনই যথার্থ সময়। কোথাও কোথাও হয়তো এখনও আমাদের খানিকটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আমরা সেসব সীমাবদ্ধতা দ্রুততার সঙ্গে দূর করতে সক্ষম হবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই এ বিশ্ব একদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। তবে বিশ্বকে করতে না পারলেও বাংলাদেশ তথ্যা দক্ষিণ এশিয়াকে করতো পারবো, সে বিশ্বাস আমরা রাখি।



মন্তব্য চালু নেই