মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে মাঠ সরব, কমিশন নীরব!

সম্প্রতি দেশে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে মধ্যবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মহলে চলছে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে রাজনীতির মাঠে মধ্যবর্তী নির্বাচনের হাওয়া যতই সরগরম হোক, কিন্তু যারা এ নির্বাচনের আয়োজন করেন সেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) রয়েছে একেবারেই নীরব। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললে রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। যদিও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।

অপরদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের ভাষায় গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বৈধতা পায়নি। তাই দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তাদের।

মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো সংকেত পাইনি।

তিনি আরো বলেন, দু’টি কারণে সাধারণত মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ে থাকে। একটি হল সরকার যদি প্রচণ্ড চাপে থাকে, আরেকটি হল সরকার যদি খুবই ভালো কাজ করে সফল হয় তাহলে। কারণ চাপে থাকলে সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। আবার খুব বেশি সফল হলে সরকার মনে করতে পারে এ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে তার সরকারকেই জনগণ ভোট দেবে। যেহেতু তার সরকার খুব ভালো কাজ করছে। তাই আগাম নির্বাচন দিয়ে দলকে আরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় রাখা। আমার মনে হয় না আমাদের দেশের সরকার এ দু’টির কোনোটিতে আছেন। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

এছাড়া কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। যে কমিশনকে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ বলে আসছে বিএনপি। তাদের অধীনে সংসদের কোনো উপ-নির্বাচনে যায়নি বিএনপি। শুধু স্থানীয় নির্বাচনে গিয়েছিল। সেই কমিশনের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কীভাবে যাবে বিএনপি।

নতুন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এ নির্বাচনের বিষয়টিও সামনে আসে। আলোচনায় রয়েছে মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কি না বা কীভাবে এবার গঠন হবে নতুন কমিশন। যদিও ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন গতবারের মতোই সার্চ কমিটি গঠনের মাধ‌্যমে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

যদিও সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই, সেখানে বলা আছে শুধু রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করবেন। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি গঠন করতে হবে সেই বিষয়ে সংবিধানে বিস্তারিত কোনো কিছু বলা হয়নি।

নতুন কমিশন গঠনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে জানান, কোনো প্রক্রিয়াতে নতুন কমিশন গঠন করা হবে এটা সরকারের বিষয়। আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।

অবশ্য নতুন কমিশন গঠন সম্পর্কেও বিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান ইসির মতো ‘আজ্ঞাবহ’ নতুন নির্বাচন কমিশন মেনে নেওয়া হবে না বলে সরকারকে আগাম হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

সম্প্রতি এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, অবশ্যই নির্বাচন চাই। অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ও স্বাধীন নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা সেই নির্বাচন চাই। গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে আপনি নির্বাচন পরিচালনা করবেন, আপনি আপনার মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নেবেন, সেই নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না। সার্চ কমিটি করেন, আর যাই করেন, জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।খবর পরিবর্তনের।



মন্তব্য চালু নেই