মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সিরিয়াল বাংলাদেশে এতো জনপ্রিয় যে কারণে

বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক বিভিন্ন সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করার প্রবণতা বেড়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে এসব সিরিয়াল বন্ধ করার জোরালো দাবীও উঠেছে টেলিভিশন নাটকের শিল্পীদের দিক থেকে।

নাটকের শিল্পীরা বিষয়টিকে যেভাবেই দেখুক না কেন, এসব সিরিয়াল দর্শকদের একটি অংশের মাঝে সমাদৃতও হচ্ছে।

দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে অনেকেই এক বা একাধিক এসব সিরিয়াল প্রচার করছে। ‘সুলতান সুলেমান’ , ‘ইউসুফ-জুলেখা’ এসব সিরিয়ালের মধ্যে অন্যতম।

কিন্তু এসব সিরিয়াল কেন দর্শকদের একটি অংশের কাছে কেন এতো জনপ্রিয় হচ্ছে?

ঢাকার একজন দর্শক সায়মা সুলতানা এ্যানি জানালেন, ” এগুলো অনেক সুন্দর। এসব নাটক ফ্যামিলির সাথে বসে দেখার মতো।” মুসলমান শাসক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম সমাজের ইতিহাসকে তুলে ধরার বিষয়টিকে বেশ পছন্দ করেন তিনি।

আরেকজন দর্শক বলেন, “রাজা-বাদশাহদের কী কারণে পতন হয় না হয় – এগুলার ব্যাপারে একটা অভিজ্ঞতা হয়।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক এসব সিরিয়ালের নির্মাণশৈলী বাংলাদেশের অনেক অনুষ্ঠানের চেয়ে বেশ এগিয়ে। অন্যদিকে এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু এবং সংলাপের মধ্যে ইসলামী ভাবধারা এবং মুসলমান শাসকদের ইতিহাসের কিছু বিষয় আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন

এবং চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া মনে করেন, বাংলাদেশের অনেক দর্শক এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তুর সাথে নিজেদের মনের এক ধরনের সংযোগ স্থাপন করতে পারেন। ফলে সিরিয়ালগুলো দর্শকদের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

বিদেশি টিভি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে কয়েকমাস আগে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে শিল্পী ও কলাকুশলীরা মি. ভূঁইয়া বলেন, ” মধ্যপ্রাচ্যে তো মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে আর বাংলাদেশেরও অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য তারা বোধ করে। সেটা থেকে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়।”

দর্শকপ্রিয়তা থাকলে এ ধরণের প্রবণতা দেশের জন্য নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কারণ মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক এসব টিভি সিরিয়ালে সেখানকার ইতিহাস প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে এটা দীর্ঘমেয়াদী বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে ।

বছর দু’য়েক আগে বেসরকারি দীপ্ত টিভিতে ‘সুলতান সুলেমান’ নামে তুরস্কের একটি ধারাবাহিক প্রচার শুরু হয়। তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাহিনী অবলম্বনে এটি তৈরি হয়।

সেটির দর্শকপ্রিয়তা দেখে আরো কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এ ধরনের বাংলায় ডাবিং করা সিরিয়াল প্রচার করতে শুরু করে।

দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কাজী উরফি আহমেদ জানালেন এ সিরিয়ালটি প্রচার কারার আগে তারা দর্শকদের চাহিদা নিরূপণের চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, ” এসব সিরিয়াল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখানো হয়। এসব জনপ্রিয়ও হয়। আমরা সেটাকে একটা মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করি। তাছাড়া আমরা আমাদের দর্শকদের মাঝে জরিপ চালিয়ে বোঝার চেষ্টা করি তারা কী ধরনের গল্প দেখতে আগ্রহী।”

এক সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বিটিভিতে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সিরিয়াল প্রচার হতো। সেগুলো কখনো বাংলায় ডাবিং করা হতো আবার কখনো ইংরেজিতেই প্রচার হতো।

সেসব সিরিয়াল বেশ দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছিল। কিন্তু এখন পাশ্চাত্যের কোন সিরিয়াল প্রচারে আগ্রহী নয় বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। সে জায়গা নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক টিভি সিরিয়াল।

মি. ভূঁইয়া মনে বলছেন, এক সময় পাশ্চাত্যের এসব সিরিয়াল বিনামূল্যে অথবা সুলভ মূল্যে পাওয়া যেত। কিন্তু কপিরাইট আইন কঠোর হওয়ার কারণে এসব সিরিয়াল আনতে এখন অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তাছাড়া এখনকার মতো অতীতে ভারতীয় কিংবা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অনুষ্ঠান এতো সহজলভ্য ছিল না।

তিনি বলেন, ” মধ্যপ্রাচ্যের কনটেন্ট এনে যদি লাভজনক হওয়া যায়, তাহলে প্রাইভেট চ্যানেলগুলো সেটাই আনবে। আমার ধারণা সেটাই হচ্ছে।” তার মতে, এ সিরিয়ালগুলো আনার কারণে সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পী ও কলা-কুশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই