মওদুদের স্থান কোথায়?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনিই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামেও তার পরামর্শ দেখা হয় গুরুত্ব সহকারে। অথচ এ নেতাকেই জায়গা ছেড়ে দিতে কার্পণ্যবোধ করলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

এদিকে দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জায়গা ছেড়ে না দিয়ে ফজলুল হক মিলন ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করেন উপস্থিত বিএনপির একাধিক নেতা। তাদের ভাষ্য, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে তার ব্যক্তিগত কাজে আসেননি। তিনি দলের পক্ষ থেকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়ার সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি মিলন ও আলালদের রোষানলে পড়লেন। আসলে দলে কিছু নেতা আছেন যারা রাজপথের আন্দোলনে থাকবেন না অথচ গণমাধ্যমে আসার জন্য সামনের সারিতে দাঁড়াবেন। আর এ জন্য তারা শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরকেও মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা করেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত দলের এক নেতা বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে ফজলুল হক মিলন ও আলাল যে আচারণ করেছেন তা ঠিক হয়নি। এ ঘটনার ফলে বিএনপি নানান রকমের প্রশ্নের সম্মুখিন হবে। কারণ মিলন ও আলালদের মতো মধ্যম সারির নেতারা যখন মওদুদ আহমদের সঙ্গে এ ধরনের আচারণ করে তখন সবার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, আসলে বিএনপিতে মওদুদের স্থান কোথায়?’

ঘটনাটি ঘটে শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ জিয়ার সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে যান দলটির নেতৃবৃন্দসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই চন্দ্রিমা উদ্যানে সমবেত হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সকাল ১০টায় শহীদ জিয়ার সমাধিস্থলে উপস্থিত হন। এরপর পর্যায়ক্রমে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালাম আজাদ, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ওসমান ফারুকসহ দলের অন্য নেতারা উপস্থিত হন।

সর্বশেষ জিয়ার সমাধিস্থলে উপস্থিত হন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আর ঠিক তখনই ঘটনাটির সূত্রপাত। নজরুল ইসলাম খান এসময় মওদুদ আহমদকে সামনে জায়গা করে দেয়ার জন্য ফজলুল হক মিলন ও আলালকে একটু সরে যেতে বলতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। এতেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা, বরং হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে মওদুদকে পিছনে সরিয়ে দেন। তবে এটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত তা জানা যায়নি। সেখানে তখন কিছুটা হট্টগোল দেখা দেয়। ফলে মওদুদকে ‘জায়গা করে দাও তোমরা’ নজরুল ইসলাম খানের এ কথা যেন আকাশে ভেসে উড়ে চলে গেল। যার ফলশ্রুতিতে ফজলুল হক মিলন ও আলালের পিছনে দাঁড়িয়েই মওদুদ আহমদ শহীদ জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন জানান।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সামনে জায়গা করে না দেয়ার কারণে নেতাকর্মীদের উপর কিছুটা মনক্ষুণ্ণ ছিলেন নজরুল ইসলাম খান নিজেও। আর এ কারণেই হয়তো গণমাধ্যমের সাথে কথা না বলেই নীরবে তিনি চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে বের হয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা কোনোভাবেই দেখছি না।’



মন্তব্য চালু নেই