ভোলা কারাগারের অবস্থা নাজুক ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দীদের চাপে

ভোলা জেলা কারাগারটি ১৯৯২ সালে পুলিশ লাইনের বিপরীতে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করে। এর পূর্বে ১৯৮৪ সালে কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কারা অধিদপ্তরের আধীনে থেকে কারা বিধি মোতাবেক তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। “রাখিবো নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” এই মূলনীতি নিয়েই ভোলা জেলা কারাগারে এক দিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, এছাড়া রয়েছে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বন্দী রয়েছে বর্তমানে । বন্দীদের চাপে এখন ভোলা কারাগারের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। গত দু’দিনে জেলা ছাএদলের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদকের ছোট ভাই কারাগারে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদেরকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে কারাকর্তৃপক্ষ।

ভোলা কারাগারের জেলার শফিক আহমেদ প্রচন্ড গরমের কারণে বন্দীরা ছটফট করে এটা স্বীকার করে বলেন,এ জন্য কারাগারের মূল কক্ষ লকআপ না করে বারান্ধায় বন্দীদের সুবিধার্থে খুলে দেওয়া হয়েছে যাতে তাদেরকে গাদাগাদি করে থাকতে না হয়।

কারা সূত্রে জানা গেছে, ২৭৫ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভোলা জেলা কারাগারটি এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী ও ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুরের সহযোগীতায় নির্মিত হয়। তৎকালীন সময়ে নাজিউর রহমান বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম কারাভ্যন্তেরের প্রতিটি কক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্যান ও কালার টিভি সংযোজন করেন। যাতে হাজতী ও কয়েদী বন্দীরা যাতে আধুনিক জীবনমান ও চিত্র বিনোদনের পাশাপাশি নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পায় তারা বন্ধোবস্ত ছিল কারাগারটিতে।

দীর্ঘকাল ধরে আধুনিক সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় পুরোনো ভবন সমূহ রঙ ও আস্তার বিহীন হয়ে পড়েছে। ১৯৯০ সালের পর কারাগারটিতে কেবল বার্ষিক চুনকাম,রং আস্তর করা ছাড়া বড় ধরনের কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম হয়নি। রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীরা অপজিশন পলিটিক্স করা কারনে কারাগারে গেলে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে কারাগারকে পরিবর্তন করে ফেলব। যখন ক্ষমতায় আসেন তখন কারাস্মৃতি হয়ে থাকে। সম্প্রতি সরকার বিরোধী আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীন হয়। নিয়মিত হাজতী ও কয়েদীদের সাথে রাজবন্দীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে কারা পরিবেশ অসহনীয় হয়ে পড়েছে বলে আটক ও জামিনে মুক্তি পাওয়া বন্দীরা জানান।

ভোলা কারাগারে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ কখনো এ সংখ্যা সাড়ে ৬শ পর্যন্ত হয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বেশী। সরকার বিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলেও আদালতে জামিনের না মঞ্জুর হওয়ায় বন্দীর আনুপাতিক সংখ্যা বেড়েই চলছে প্রতিদিন। ভোলায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্বরণকালের ভয়াবহ এক রকম গরম পড়ছে। তার সাথে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিদ্যুৎতে লোড শেডিং এলো ভোল্টেজ ও ঘন্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট। প্রচন্ড গরমে যেখানে বাসা বাড়িতে টেকা দায় সেখানে কারাগারে উপচে পড়া ভীড়ে বন্দীদের অবস্থা সহজেই বোঝা যায়। কারা কর্তৃপক্ষ ভোলা কারাগারে বন্দীদের আরামে রাখার জন্য কক্ষে লকআপ না করে বারান্দায় লকআপ করায় বন্দীগণ একটু সুবিধা পেলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারাবাস রীতিমত অসহ্য হয়ে পড়েছে। ভোলা কারাগারের বাহিরে বন্দীদের উদ্বিগ্ন স্বজনদের ভিড় ও লক্ষ্য করা গেছে।

উদ্বেগের সাথে স্বজনরা জানাতে চান কারাভ্যন্তরে তাদের আপনজনেরা কেমন আছে ? সব মিলিয়ে কারাগার যেন এখন জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। যাতে বাধ্য হয়ে সিদ্ধ হচ্ছে হাজতী কয়েদি নামের মানুষ গুলো। বন্দীদের স্বজনদের মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ মামলার ডেঞ্জারাস আসামি ব্যতীত অনেক সহজ ধারার মামলার আটক আছে শত হাজতী। সরকার যদি তাদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেন তবে কারাগারের পরিবেশ অনেকটা সহনীয় অবস্থায় ফিরে আসতো।



মন্তব্য চালু নেই