ভোলায় জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে মেঘনার ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে

মোঃ ফজলে আলম, জেলা প্রতিনিধি, ভোলা : ভোলায় জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভোলায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত প্রায় ৪ দশকে মেঘনা ও তেতুলিয়ার অর্ধশতাধিক বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন লাখের বেশী মানুষ। ভাঙ্গন রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হলেও এখনও পর্যন্ত সেই কাজ শুরু হয়নি। এতে একের পর এক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সমগ্র উপকূলের মানুষ। গবেষণার মাধ্যমে দ্বীপজেলাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষার দাবী এ জেলার আতকিংত মানুষের।

ইতিহাস বলছে, ১২৩৫ সালের দিকে বঙ্গোসাগরের কোল ঘেষেই দ্বীপজেলা ভোলায় একবিংশ শতাব্দির সত্তর দশকের দিকে শুরু হয় ভাঙ্গন। ৮০ দশকে যার তীব্রতা বেড়ে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত বাধ, ভাঙ্গন রোধে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ও মানব সৃষ্ট নানা কারণে বর্তমানে ভোলা সদর,দৌলতখান,বোরহানউদ্দিন,হাকিমুদ্দিন,তজুমদ্দিন চরফ্যাশন ও মনপুরা পয়েন্ট দিয়ে মেঘনা তেতুলিয়ায় তীব্র ভাঙ্গন চলছে। এই ভাঙ্গন এখন ভোলাবাসীরকে শঙ্কিত করে তুলছে।

জেলা বিটিভি’র সাংবাদিক এমএ তাহের (৭৩) বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনে ব্যাপক ভাঙ্গন চলছে। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে যে কাযক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে তা কোন কাজেই আসছে না। তাই ভাঙ্গন রোধে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভোলাকে রক্ষা করা যাবে না।

ভোলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির আহবায়ক অমিতাভ রায় অপু বলেন, প্রায়৭০ দশক থেকে ভাঙ্গন শুরু হলেও ৮০ দশকে তা অনেক কম ছিলো। কিন্তু দিন দিন এ ভাঙ্গনের পরিমাণ বাড়ছে। এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

তিনি বলেন, নদী ও সাগর মোহনায় লবনাক্ততা বেড়ে গেছে, এই লবণ পানি ও অতি জোয়ার উপকূলে আঘাত হানলে ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। দিন দিন এর রেশ বাড়ছে আর এ কারণেই আমরা ভোলাবাসী হুমকির মুখে রয়েছি।

বোরহানউদ্দিন গঙ্গাপুর এলাকার বাসিন্দা আসলাম শিকদার (৬০) বলেন, ১৯৭০ থেকেই তেতুলিয়ার ভাঙ্গন শুরু হয়, এ ভাঙ্গনে ইতোমধ্যেই ৪টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙ্গন প্রতিরোধ হচ্ছে না।

এদিকে ভোলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বাহাউদ্দিন বলেন, জলবায়ু নিয়ে কথা হলেও এর থেকে উত্তেরনের কোন কাজ হচ্ছে না। তাই স্থায়ী গবেষণার মাধ্যমে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা হয়েছে লাখো মানুষ। বসতভীটা, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ হাটবাজারসহ নানা স্থপনা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় এলাকা। আগামী কয়েক বছরে দ্বীপজেলার জন্য অশনি সংকেত বলেও মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ভোলার নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা অনেক বেশী, বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে দিন দিন ভোলা ছোট হয়ে আসছে।

এ বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বর্তমান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইউনুস বলেন, ভাঙ্গন রোধে বরাদ্দ হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরেই কাজ শুরু হবে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ হবে পরবর্তী মৌসুমে সিসি ব্লকের কাজ শুরু হবে।

পাউবো ডিভিশন-২ চরফ্যাশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহে আলম ও মনপুরার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা ও সুস্ক মৌসুমে মনপুরা ও চরফ্যাশনের ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। বেশী ভাঙ্গছে মাদ্রাজ এবং চর ফয়েজউদ্দিন পয়েন্ট দিয়ে। নদী ভাঙ্গনসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলাকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন ।



মন্তব্য চালু নেই