ভোট শেষ, গণনা শুরু

বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা, অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এবং ডজন দুয়েক প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এখন চলছে ভোট গণনা।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রের ফল আসতে শুরু করেছে। এসব কেন্দ্রে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান বিপুল। যেমন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লগের প্রার্থী পেয়েছেন ১৩৬৫ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ৭৭ ভোট। ভোলার দৌলতখান পৌরসভার একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ৬০২ ভোট ও বিএনপির প্রার্থীর ভোট ৪০। ভোলার বোরহানউদ্দিনে দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ১৪৩৮ ভোট ও বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ১১৭। ভোলা সদরের দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৪৫৫ ও বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ১৮৬ ভোট। নারায়ণগঞ্জের তারাবতে একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন ১০৬৭ আর বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ১৭১ ভোট।

আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে ভোট নেয়া। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরে যশোরের একটি কেন্দ্রে বিকাল চারটায় ভোট গণনা শেষ হয়ে যাওয়ার খবর প্রচারিত হয়েছে। খবরে বলা হয়, বেলা তিনটার সময় প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গণনা শুরু করেন। আর চারটার আগেই ভোট গণনা শেষ হয়।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট ছিল বলে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরেছে ভোট দেয়ার জন্য। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যেতে থাকে ভোটের চিত্র। সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকে সহিংসতা। কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির অভিযোগে একের পর এক ভোট বর্জন করতে থাকেন প্রার্থীরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন ৩২ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ১৫, জাতীয় পার্টির ৪, ইসলামী আন্দোলনের ২ এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ স্বতন্ত্র ১১ প্রার্থী।

কোথাও কোথাও ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপারে অবাধে সিল মারতে দেখা গেছে।

সহিংসতা, ভোট কারচুপি, গোলযোগের অভিযোগে ৪০টির মতো কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

দিনভর গোলযোগের পর নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে ডিসি-এসপির সামনে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ভোট চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভোটগ্রহণ চলাকালে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে নুরুল ইসলাম নামে একজন মারা গেছেন।

বরগুনায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণ পর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজ।

ফেনীর দাগনভূঞায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। নড়াইলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী।

এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহের ভালুকা, জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সকাল থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। সকালে ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যায় অভিযোগ করতে। এর কিছুক্ষণ পরই এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যায়। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কারো সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ।

নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ব্যাপক কারচুপি করে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। ১৫৭টি পৌরসভায় বিএনপি সমর্থকদের নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দাবি করেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হচ্ছে। বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বকছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত করতেই বিএনপির এসব অভিযোগ।



মন্তব্য চালু নেই