ইসিতে প্রার্থীদের অভিযোগ

ভোটের বাতাসে উড়ছে টাকা

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই দিন। রাজধানীর দুই অংশের নগরপিতার আসনে বসতে দিনরাত এক করে ফেলছেন মেয়র পদপ্রার্থীরা। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। রাজধানীর ভোটের আমেজে সারাদেশে এখন উৎসব আর আতঙ্কের মিশ্র আমেজ।

হুমকি ধামকি, অস্ত্রের ঝনঝনানি এসবের অভিযোগ তো আছেই এর মধ্যে পয়সাওয়ালা প্রার্থীদের টাকা ছড়ানোর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীতে এখন ভোটের বাতাসে উড়ছে টাকা! এ অভিযোগ সবচেয়ে বেশি উঠছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ থেকে মুক্ত নন মেয়র প্রার্থীরাও। তারাও টাকা ছড়াচ্ছেন দরাজ হাতে- এমন অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় বা স্থানীয় এমনকি কোনো সমিতির নির্বাচনেও টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ নতুন কোনো খবর নয়। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় ঘটছে না। এমনকি নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানোর বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। মূলত, রাতের আঁধারে টাকা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনে আসা অভিযোগে বলা হচ্ছে, টাকা দিয়ে ভোট কিনতে টার্গেট করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত গরিব, পোশাক শ্রমিক আর বস্তিবাসীকে। তবে ‘চাঁদরাত’ অর্থাৎ ভোট গ্রহণের আগের রাতে রাজধানীজুড়ে ব্যাপকভাবে টাকা ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেক প্রার্থী।

মিরপুর-১ এলাকার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অভিযোগ করেছেন, সেখানকার পোশাক শ্রমিকদের কাছে ভোট কিনতে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। রাত যত গভীর হয় দরিদ্র এলাকায় ততই বেড়ে যেতে থাকে অপরিচিত ও সন্দেহজনক লোকজনের আনাগোনা। নির্বাচনী প্রচারণা শেষে এখন প্রার্থীরা নিজেদের ‘ভোটের বাজার’ পর্যবেক্ষণ করে ভোটারদের ভোট কেনার দিকে নজর দিয়েছেন। এজন্য অনেকেই নিজেদের পৃথক কর্মীবাহিনী নিয়োগ করেছে। যারা সন্ধ্যার পর থেকে দরিদ্র ও বস্তিবাসীদের দুয়ারে ভোট কিনতে হাজির হচ্ছেন।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই রাতের টাকা বিলি করার খবর পাওয়া গেছে। টাকা দেওয়ার পর ভোট নিশ্চিত করতে প্রার্থীর কর্মীবাহিনী ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি করেও রাখছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে দক্ষিণ ও উত্তর রিটার্নিং অফিসারের কাছেও এ বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

নির্বাচন কমিশনে অভিযোগকারী উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ বলেন, ‘ভোটের আগেই কালো টাকা বিলি শুরু হয়েছে। এভাবে চললে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতিও হতে যারে। এ কারণে নির্বাচনী মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তুষার আহমেদ এক অভিযোগপত্রে বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও কালো টাকার উৎসব বন্ধ করা না গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এজন্য দ্রুত ইসিকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

নির্বাচনী মাঠে কালো টাকার খেলা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন। তিনি বলেন, ‘বড় দুই দলের প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে বিধি লঙ্ঘন করে অঢেল অর্থ ব্যয় করছেন।’

নির্বাচনে কালো টাকার উৎসব চলছে বলে অভিযোগ করে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক কামাল লোহানী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশনের দেয়া আচরণবিধি কেউ মানছেন না। নির্বাচনের আগে থেকেই টাকার প্রচার উৎসব চলছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এসবের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এখনই নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হাতে এর মোকাবিলা করতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন প্রশ্নবোধক হয়ে থাকবে।’

নির্বাচনের মাঠে কালো টাকার ছড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রতি নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে টাকার খেলা চলে। কমিশনকে এদিকে কড়া নজর দিতে হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে।’

প্রত্যেক নির্বাচনের সময় কালো টাকার উৎসব শুরু হয় উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইসিকে এদিকে বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দেন।

তবে কালো টাকার ব্যবহার ও ভোট কেনার অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সর্বত্রই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। রাতের আঁধারে ভোট কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও এরকম ঘটনা কোথাও ঘটলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়া হবে।’

অপরদিকে উত্তরের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমরা প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্বাচনের আগে অর্থের লেনদেন যাতে না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে কাজ করছে।’

কালো টাকার ও পেশীশক্তির প্রভাব কঠোরভাবে দমন করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের আগের তিন পর্যন্ত তৎপর থাকবে বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই