ভোটারের মন জয়ের সময় আছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা

পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ব্যালট পেপার জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর রোববার সেগুলো পৌঁছবে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। এদিকে, ২৮ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। সে প্রার্থীরা ভোটারের মন জয়ের সময় পাচ্ছেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রোববার মধ্য রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইলে চলাচলে নিষধাজ্ঞা আরোপ হবে। সেই সঙ্গে সোমবার সকাল থেকে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে মাঠে নামছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। ২৮ তারিখ মধ্যরাতে পর প্রার্থীরা আর প্রচারণা চালাতে পারবে না।

এ বিষযে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম করতে হবে তার বিস্তারিত নির্দেশনাসহ ১২টি পরিপত্র দেয়া শেষ হয়েছে। এখন রিটার্নিং অফিসারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভোটের আয়োজন শেষ করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিধি লঙ্ঘন, অভিযোগসহ যদি কোনো বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত চান তাহলে ইসি সিদ্ধান্ত দেবে। এছাড়া, বাকি সব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারদের ক্ষমতা দেয়া আছে।’ প্রচারের শেষ সময়ে বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও প্রস্তুত আছেন। প্রচারণার শেষের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে। সোমবার রাত ১২টা থেকে কোনো প্রচারণা থাকবে না। নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্রে যাবে ভোটের আগের দিন। ফলে আর ৪৮ ঘণ্টা পর ভোটের জন্য প্রস্তুত হবে মাঠ কর্মকর্তারা।

ব্যালট পেপার পাঠানো প্রসঙ্গে ইসির উপ সচিব সাজাহান খান জানান, শনিবার পৌর নির্বাচনের দুই কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী ঢাকা থেকে ৬৩ জেলায় পৌঁছে। আগামী কাল পৌরসভাগুলোতে বিতরণ করা হবে। ব্যালট পেপার, সিল, ফলাফল প্রস্তুত-বিতরণের ফরম-প্যাকেটসহ নির্বাচনী সামগ্রী হাতে পেয়ে কেন্দ্রভিত্তিক পৌঁছে যাবে।

এদিকে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে ৬৫ হাজারের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে। ৪ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬৫ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এক কর্মকর্তা জানান, পৌরসভা নির্বাচন এখন পর্যন্ত ৪ জন সংসদ সদস্যেসহ ১০০ প্রার্থী-সমর্থককে জরিমানা, শোকজ-সতর্ক করা হয়েছে।

এর মধ্যে তিন হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখের বেশি হবে না বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

বিধি অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণা শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে ভোট শেষের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাও কোনো মিছিল-শোডাউন করা যাবে না।

প্রচারণা বন্ধ বিষয়ে পৌরসভার একজন রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রচারণা শেষে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৯ ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সব ধরনের সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।’

ইসি কর্মকর্মরা জানান, তফসিল ঘোষণা পরবর্তী একমাসে নির্বাচন কমিশন ৭৮টি অভিযোগের বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের তদন্ত করতে বললেও অধিকাংশেরই প্রতিবেদন এখনো আসেনি ইসিতে। এর মধ্যে যে ১৮টি প্রতিবেদন এসেছে তাতে অধিকাংশের সত্যতা পায়নি রিটার্নিং অফিসাররা। কয়েকটির বিষয়ে স্থানীয়ভাবে
ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা (দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

২৩৪ পৌরসভায় বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, স্পিক আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামরুল আহসান এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এছাড়া, নির্বাচনী এলাকায় ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ
নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রোববার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি হবে বলে জানান ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোমবার থেকে মাঠে থাকবে। ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগে নির্দেশ থাকবে ওই পরিপত্রে। সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেপ্তার ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন ও পুলিশ। ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী আরো চার দিন পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। বৈধ লাইসেন্সধারীদেরও বস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে।’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরিক্ষত কাউন্সিলর পদে প্রায় ১২ হাজার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। ইতোমধ্যে ২৩৪ পৌরসভায় ৬ মেয়র প্রার্থী, ৯৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই