ভুলেও খাবেন না এই মাছ!

রীতিমতো আসক্ত না হলেও মাঝেমধ্যে শখের বশে হালকা একটু নেশাপানি অনেকেই করে থাকেন। সেই সুবাদেই হোক অথবা ভিন্ন কোনো মাধ্যম থেকেই হোক মদ, গাঁজা, কোকেইন প্রভৃতি মাদকের প্রভাব সম্পর্কে আমরা সবাই-ই কম-বেশি জানি।

এ তো গেল প্রচলিত ধরনের মাদক বা নেশাদ্রব্যের কথা। কিন্তু অবাক করার ঘটনা হচ্ছে, এমন এক প্রজাতির মাছ ও রয়েছে, যা মানবদেহে মারাত্মক মাদকের প্রভাব সৃষ্টি করে।

আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম আফ্রিকান উপকূল আর মেডিটার্নিয়ান সাগরে দেখা মেলে কমলা স্ট্রাইপযুক্ত শরীরের ‘সার্পা সালপা’ নামক এই বিশেষ মাছের। এই মাছ নিরীহ চেহারার হলেও, এটি খেলে মানব শরীরে এলএসডি কিংবা কোকেইন-এর মতো মারাত্মক মাদক দ্রব্যের সমপর্যায়ের প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে।

এলএসডি মাদক যেমন বিচিত্র চলচ্ছবি ও রহস্যময় অভিজ্ঞতার হ্যালুসিনেশন মস্তিষ্কে তৈরি করে তেমনি ছোট এই সার্পা সালপা মাছও মস্তিষ্কে অলীক কিছু তৈরি করে, যেসব জিনিস আপনি আগে কখনো দেখেননি তেমন দুঃস্বপ্নের হ্যালুসিনেশন হতে পারে।

আরব অঞ্চলে এই মাছকে বলা হয়, ‘এমন মাছ, যা দিবা স্বপ্নের জন্ম দেয়’। হ্যাঁ, আসলেই তাই! ২০০৬ সালে ‘ক্লিনিক্যাল টক্সিসিটি’-র ওপরে প্রকাশিত একটি জার্নালে এ সম্পর্কে দুটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়।

যার প্রথমটি ছিল ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের ক্যানিসে ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া এক ভদ্রলোকের। রান্না করা সার্পা সালপা খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার প্রচন্ড পরিমাণে গা গুলাতে আরম্ভ করে এবং তিনি ছুটির আনন্দ বাদ দিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। নিজে গাড়ি চালিয়ে যখন বাড়িতে ফিরছিলেন তখন তার মনে হতে থাকে যেন বিশাল আকৃতির কিছু কীটপতঙ্গ যেন তার পথরোধ করার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালাচ্ছে। কোনোমতে গাড়ি চালিয়ে ফিরতি পথে তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পুরোপুরি সুস্থ হতে তার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা লেগে যায়।

ফ্রান্স-ইটালির ভূমধ্যসাগরীয় তটভূমি অঞ্চলের সঙ্গে এই মাছটির যেন কোথায় এক গভীর সম্পর্ক আছে! কারণ আমাদের দ্বিতীয় ঘটনাটিও এখানকারই সেন্ট-ট্রোপেজের। নব্বই বছর বয়স্ক বৃদ্ধ যখন মাছটি খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিলেন তখনই হঠাৎ তার প্রচন্ড হ্যালুসিনেশন শুরু হয়। মনে হতে থাকে যেন কতগুলো মানুষ তীব্র চিৎকার করছে আর পাখির কর্কশ-গগনবিদারী চিৎকারে ভারী হয়ে আসছে চারপাশ। প্রথমে তিনি এটি কাউকে জানাননি, কারণ লোকে এটাকে ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি’ ভাবতে পারে! কিন্তু ব্যাপারটা যখন কয়েকদিন ধরে স্থায়ী হল, তখন তিনি স্থানীয় পয়জন কন্ট্রোলিং সেন্টারের শরণাপন্ন হন।

এই হ্যালুসিনেশনের নাম ‘ইচিয়োঅ্যালাইনিটক্সিজম”। বিজ্ঞানীরা এর সঠিক কার্যকারণ এখনো নির্ণয় করতে না পারলেও মোটামুটি নিশ্চিত যে, এই মাছগুলোর শরীরে এমন মারাত্মক মাদকতার কারণ এদের খাদ্যাভাস।

২০১২ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় জানা যায়, সার্পা সালপা মূলত সমুদ্র শৈবালে জন্ম নেয়া ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খেয়ে বেঁচে থাকে। আর এই ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনই মাছটির শরীরের সর্বাংশে এমন ভয়ংকর বিষক্রিয়া ছড়ায়। কিন্তু এই বিষাক্ত পদার্থটি নাম এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, তা সম্ভবত এলকালয়েড্‌স। রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে এলকালয়েড্‌স এলএসডি’র সমতুল্য। আর সেটাই হয়তো এই ধরনের হ্যালুসিনেশনের জন্য দায়ী। -ওয়েবসাইট।



মন্তব্য চালু নেই