ভিডিওতে ওই ব্যক্তি হাসনাতই, শনাক্ত করলেন বাবা

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় ছেলে হাসনাত রেজা করিম জড়িত থাকলে পুলিশকে তা প্রমাণের অনুরোধ জানিয়েছে বাবা রেজাউল করিম। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত থাকলে ছেলের বিচারও চেয়েছেন তিনি।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় একটি ভিডিও’র সূত্র ধরে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যায় হাসনাত করিমকে নিয়ে। দক্ষিণ কোরীয় এক নাগরিকের মোবাইলে তোলা ভিডিও ফুটেজ দেখে তার গতিবিধি সন্দেহজনকও মনে হয়েছে। গত শনিবার সকালে সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানে যে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন এই হাসনাত করিম এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।

কোরীয় নাগরিক ডিকে হোয়াংয়ের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে, ন্যাড়া মাথার চেক গেঞ্জি ও ‍জিন্স পরা এক ব্যক্তিকে একাধিক স্থানে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করার মতো সন্দেহজনক আচরণ করতেও দেখা যায়। হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের কাচের তৈরি মূল ফটকটিতে তাকে বেশ কয়েকবার এসে ঘুরে যেতেও দেখা যায়। দুই অস্ত্রধারীর সঙ্গে ছাদেও দেখা গেছে তাকে।

ভিডিওতে হাসনাত করিমের সন্দেহজনক এ আচরণের বিষয়ে তার বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘কোরিয়ান নাগরিকের ভিডিওটা আমিও দেখেছি। ওটা দেখে মনে হচ্ছে তাকে (হাসনাত করিম) নিয়ে জঙ্গিরা ঘুরে বেড়িয়েছে। তবে একটাবার কেউ ভাবলো না যে, অস্ত্রের মুখেও তো তাকে এভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হতে পারে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বৃদ্ধ বাবা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, আমার ছেলে এ ধরনের (জঙ্গি কর্মকাণ্ড) একটা কাজে জড়িত থাকতে পারে। ওকে আমি ছোটবেলা থেকেই জানি। সে কোনো কাজেই সিরিয়াস না।’

‘বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সে ঠিক মতো কখনো রোজাটাও পর্যন্ত করে না। নামাজ-কালাম তো দূরের কথা। শুধু জুমার নামাজটা নিয়মিত মসজিদে গিয়ে আদায় করে’, যোগ করেন রহমান করিম।

তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্টে কি হয়েছিল, সেটাতো ওখানকার শেফদের কাছে শুনলেই জানা যায়। এ বিষয় নিয়ে তিনদিন তাকে আটকে রাখার কী মানে হয়? আর যদি তাদের (পুলিশের) কাছে হাসনাতের এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে তা আদালতে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু এভাবে আটকে রাখার তো কোনো মানে হয় না।’

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম পুলিশকে বলেছেন, মেয়ে সাফা করিমের জন্মদিন উদযাপন করতে শুক্রবার স্ত্রী শারমিন পারভীন ও ছেলে রায়ান করিমকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষক ১৯৬৬ সালে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে সরকারি বৃত্তি নিয়ে নাইজেরিয়া গিয়েছিলেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ করে দেশে ফিরে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ বিভাগে যোগদান করেন। কিন্তু সেখানেও মন না বসলে তিনি আবারও লন্ডন চলে যান।

বর্তমানে হাসনাত করিম ‘বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তারা বাবা রেজাউল করিম।

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

অভিযানে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি নাগরিক। বাকিরা বাংলাদেশি। এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।

শনিবার সকালে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ এখনো আটক রয়েছেন। তার মধ্যে হাসনাত করিমও রয়েছেন।-বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই