ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম: মুখে সন্তোষ, মনে অসন্তোষ পুলিশের

রাজধানীতে অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ‘সিস্টেমের সমস্যায়’ ঠিকমতো তা সংগ্রহ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা। এ কারণে পুলিশের ভেতরে রয়েছে অসন্তোষ। যদিও পুলিশের কর্মকর্তারা ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন। এদিকে, রাজধানীর থানাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন, তাদের অনেকেই বলছেন, যেসব অ্যাপার্টমেন্টে ফ্যামিলি বসবাসের পাশাপাশি অঘোষিত মেস ও অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়, তাদের বেশিরভাগই ঠিকমতো তথ্য দিতে পারেননি।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

মেস ও অফিসগুলো কারা ভাড়া নিচ্ছেন, সে তথ্য নেওয়া কেন সম্ভব হয়নি প্রশ্নে মাঠকর্মীরা বলছেন, অনেক বাড়ি আছে যেখানে ভাড়া নিয়ে অফিস করা হয়েছে। সেখানকার ভাড়াটিয়া তথ্য ফর্ম জমা পড়লেও সব কর্মকর্তার নাম দেওয়া হয়নি।ব্যক্তিগতভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে মেস করেছেন যারা, তারাও স্বীকার করতে চান না বলে তথ্য দেননি, এমন অভিযোগ মিলেছে। একাধিক জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন যারা, তাদের নাম একাধিক জায়গায় ডাটাবেজে আসলে পরবর্তীতে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, সেই শঙ্কা থেকেই তথ্যগোপন করা হয়েছে।

যদিও মুখে পুলিশ বলছে, তাদের কাজ প্রায় শেষ। এখন সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়ার ব্যবহার করে তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ বাকি। কিন্তু সম্প্রতি একাধিক জঙ্গি আস্তানায় পলিশি অভিযানের পর দেখা গেছে,ভাড়াটিয়া তথ্য সঠিক ছিল না। আবার অল্প দিনের ব্যবধানে বাসা ভাড়া নেওয়ায় তথ্য ফর্ম জমা না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।এমনকি কল্যাণপুরে অভিযানের পর জানা যায়, ভাড়াটিয়া হিসেবে জঙ্গিরা বাড়ি ভাড়া নিলেও তারা ভাড়াটিয়া তথ্যফরম পূরণ করেনি।কল্যাণপুরে এবং নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিরা কম সময়ের ব্যবধানে বাসায় ওঠায় ছিল না কোনও তথ্য।

গত এক সপ্তাহে প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ তথ্য ফরম ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি সফটওয়ার ব্যবহার করে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে।রাজধানীর প্রত্যেক নাগরিককে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার অনুরোধ জানান কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। যেসব বাসার মালিক ভাড়াটিয়াদের তথ্য পুলিশকে দেননি, তাদের দ্রুত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানান। অন্যথায়, ওই সব বাসার মালিকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মিরপুর এলাকায় তথ্য ফরম বিতরণকারী এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজটা করার উদ্দেশ্য খুব ভালো। কিন্তু ঢাকায় এটা বাস্তবায়ন করা মুশকিল। এখানে এখনও ভাড়াটিয়ার সাথে বাড়িওয়ালার কোনও চুক্তি হয় না। কোনও বাড়িওয়ালার কতটি বাড়ি আছে, সেগুলোর খরচ কি রকম আয়-ব্যয়ের হিসাবে ঘাপলা করতে চান। বাড়িওয়ালা আসলে নিজেও তথ্য দিতে আগ্রহী হন না। তথ্য ফরম দেওয়া হয়েছে, ফেরতও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাসায় সাবলেট থাকলে সেগুলো চেপে গেছেন, এমন অনেক অভিযোগ আছে।

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যারা এতদিনে জমা দেননি, তারা এখন দিচ্ছে।বাসা বদলের ফলে নতুন ভাড়াটেরা থানায় এসে জমা করছেন।’ তিনি বলেন, ‘শুরুতে সাড়া পেতে অসুবিধা হলেও গুলশান হলি আর্টিজানের হামলার পর থেকে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারা সতর্ক হয়েছেন। তবে প্রতি মাসে যে পরিমাণ ভাড়াটে বাসা বদলায় সেই হারে তথ্য আসছে না, এটা বুঝা যায়। তারপরও অগ্রগতি ভাল।’

শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সিটিজেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি হয়েছে।তার মাধ্যমে তথ্যভাণ্ডারে এগুলো যুক্ত হবে। আমাদের কাজ প্রায় শেষ। শাহ আলী থানার আশেপাশের বেশকিছু বাড়িতে সরেজমিনে জানা গেছে, তাদের ভাড়াটে পরিবর্তন হলেও সে তথ্য থানায় দেওয়া হয়নি। বারবার থানায় গিয়ে এটা সংশোধন করার ক্ষেত্রেও বাড়িওয়ালা তার অনীহার কথা জানান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘যারা ভাড়া নিচ্ছেন বা দিচ্ছেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সঠিক তথ্য দেওয়া তাদের দায়িত্ব। আমরা উভয়ের কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছি, সেগুলো নিয়ে এখন তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। সেটা হওয়ার পর আবারও প্রতিটা রাস্তায় গিয়ে মিলিয়ে নেওয়া হবে।’



মন্তব্য চালু নেই