ভার্সিটি ছাত্রীকে হত্যা! পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নর্দান ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী শান্তা রহমান হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পার হলেও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক বলে অভিযোগে তার পরিবারের। এ নিয়ে শান্তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে।

জানা যায়, বিয়ের ১৩ দিন পর থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী শান্তা রহমানকে মারধর শুরু করেন তার স্বামী আরিফুল ইসলাম শহিদ। আরিফুল ইসলাম শহিদ প্রায়ই স্ত্রীকে অকথ্য গালিগালাজ করতেন।বিভিন্ন সময়ে শান্তা রহমান তার বাবা-মাকে এসব বিষয় মুঠোফোনে জানাতেন। তবে সংসারের কথা চিন্তা করে তিনি মুখবুজে সব সহ্য করতেন।

নিহত শান্তার মা তামিনা সুলতানা তুহিন বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি আমার মেয়ে শান্তার সঙ্গে আরিফুল ইসলাম শহিদের বিয়ে হয়। ওই সময়ে তাকে তিন লাখ টাকার মালামাল ও প্রায় পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেই। কিন্তু বিয়ের দিন থেকেই শান্তার শাশুড়ি আজিমা খাতুন, ননদ শারমিন শিমু ও শ্বশুর সামসুদ্দিন আমাদের প্রতি ছিলেন অসন্তুষ্ট।

বিয়ের পরদিন থেকে তারা শান্তাকে দিয়ে ঘরের সমস্ত কাজকর্ম করাতে শুরু করেন। ভোর পাঁচটায় তারা আমার মেয়েকে ঘুম থেকে উঠিয়ে রান্না ঘরে পাঠিয়ে দিতো।

চুন থেকে পান খসলেই শাশুড়ি আজিমা খাতুনের নির্দেশে তার ছোট মেয়ে শারমিন শিমু আমার মেয়েকে অকথ্য গালিগালাজ করতো। এর প্রতিবাদ করতে গেলে তারা শান্তার স্বামী শহিদের কাছে মিথ্যা নালিশ করে শান্তাকে মার খাওয়াতো।

তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পরের দিন থেকে শহিদ তার মার কথামতো শান্তার কাছে যৌতুক বাবদ নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ঘরের আলমিরাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দাবি করতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, গত ২৭ জুলাই শান্তার শাশুড়ি আজিমা খাতুন ও তার শ্বশুর সামসুদ্দিন শান্তাকে তার স্বামীর বাসা থেকে ফতুল্লার আফাজ নগরের বাসায় নিয়ে আসে। ওই দিন শান্তার সঙ্গে দুপুর দুইটা ৫৫ মিনিটে শান্তার সঙ্গে আমার কথা হয়। আর বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় শান্তার শ্বশুর তার বাবা শাহিনুর রহমানকে মুঠোফোনে আমার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ জানান।

এক ভাই এক বোনের মধ্যে শান্তা ছিল বড়। তিনি ধানমন্ডি নর্দান ইউনির্ভাসিটির ফার্মেসি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারে ছাত্রী ছিলেন। শান্তা রহমান নড়াইলের কালিয়া থানার মির্জাপুর গ্রামের শাহিনুর রহমানের মেয়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, মূলত আমরা আসামিদের কাউকে চিনি না। ভিকটিমের বাবার আজকে(শুক্রবার) থানায় আসার কথা রয়েছে। উনি এলে আমরা সিরাজদিখানে আসামির বাড়িতে অভিযান চালাবো।

তিনি আরো বলেন, ভিকটিমের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।

তবে শান্তার বাবা শাহিনুর রহমানের দাবি গত ২৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানার আফাজনগরের রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া সামসুদ্দিনের বাসা থেকে শান্তা রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পরের দিন শান্তার চাচা শামীমুর রহমান বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে শান্তা রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর একটার সময় নর্দান ইউনির্ভাসিটির তার সহপাঠীরা প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ফার্মেসি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, অধ্যাপক এস এস এম মামুন মুকুল, প্রভাষক আসাদুজ্জামানসহ দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। তারা ন্যায়বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। ঢাকাটাইমস২৪



মন্তব্য চালু নেই