ভারত-প্রোটিয়া সিরিজ জয়ের লড়াই কাল

চার ম্যাচ শেষে সিরিজে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সমানে-সমান। অর্থাৎ পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-২ সমতা। তাই সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ রূপ নিয়েছে অঘোষিত ফাইনালে। যে ফাইনালের বিজয়ী দল জিতে নিবে ওয়ানডে সিরিজ।

তাই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই অঘোষিত ফাইনালের মঞ্চে আগামীকাল রবিবার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।

ভারত সফরের শুরুটা দুর্দান্তই হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় প্রোটিয়ারা। সেই সুখস্মৃতিটা ওয়ানডে সিরিজে ভালো কাজে দিয়েছে তাদের। কারণ, ভারতের সাথে লড়াইটা ভালোই করেছে তারা। দু’বার সিরিজে লিড নেয় সফরকারীরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা দু’বার লিড নিলেও, হাল ছেড়ে দেয়নি ভারত। দু’বারই বীরত্বের সাথে সিরিজে সমতা আনে টিম ইন্ডিয়া। বিশেষ করে চতুর্থ ওয়ানডেতে ভারতের জয়টি ছিলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, ওই ম্যাচটি ভারতের কাছে ছিলো বাঁচা-মরার লড়াই। হেরে গেলেই শেষ হয়ে যেত সিরিজের জয়ের আশা। কিন্তু সেখানে বিরাট কোহলিতে রক্ষা হয় স্বাগতিকদের।

চেন্নাইয়ের লোকাল হিরো ধোনিকে জয় উপহার দেন কোহলি। ব্যাট হাতে বিরাট এক ইনিংস খেলেন কোহলি। তার ১৪০ বলে ১৩৮ রানের ইনিংসটি ছিলো দর্শনীয়। তাতেই ৮ উইকেটে ২৯৯ রান সংগ্রহ করে ভারত। এরপর অবশ্য বাকি কাজটা সারে স্বাগতিক বোলাররা।

তবে কোহলির ইনিংসকে ম্লান করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু দলের অন্য কেউ ডি ভিলিয়ার্সকে প্রয়োজনীয় সঙ্গ না দেয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। তাই ডি ভিলিয়ার্সের ১১২ রানের ইনিংস বৃথাই যায়।

তবে এক দিক দিয়ে ওই সেঞ্চুরির স্বাদটা আনন্দভরেই নিয়েছেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি র্স্পশ করে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বেশিবার তিন অংকে পা দেয়া খেলোয়াড় এখন ডি ভিলিয়ার্স।

তবে এসব রেকর্ড বা পরিসংখ্যান কিছুই কাজে লাগবে না পঞ্চম ওয়ানডেতে। যেমনটা কাজে লাগবে না, কোহলি’র রেকর্ডও। আগের ম্যাচে ২৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ভারতের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান হয়েছেন কোহলি। তবে এই ধারাবাহিকতা শেষ ওয়ানডেতে অব্যাহত রাখতে চান কোহলি।

সেই সাথে পা’য়ে নিজের ক্র্যাম্প সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন কোহলি, ‘আমার ক্র্যাম্প সমস্যা এখন খুব একটা নেই। তবে পুরোপুরি ভালো হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই চতুর্থ ম্যাচে ফিল্ডিং করিনি। তবে ফিজিও জানিয়েছে, পঞ্চম ওয়ানডেতে আমি খেলতে পারবো। পঞ্চম ম্যাচে নিজের সেরাটাই দিতে উদগ্রীব আমি। সিরিজ জয়ের জন্যই খেলবো আমরা। এটাই এখন আসল ম্যাচ আমাদের জন্য।’

পঞ্চম ম্যাচটি যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা কোহলির মত ভালোই জানেন ভারত দলপতি মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তাই আসল পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে চান ধোনি, ‘চতুর্থ ওয়ানডেটি আমাদের কাছে ছিলো কঠিন পরীক্ষা। সেই চ্যালেঞ্জে জিতেছি আমরা। এখন আমাদের সামনে আসল পরীক্ষা। এটাতে উত্তীর্ণ হলেই সব কষ্ট জয় করা যাবে। এমন পরীক্ষা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। দক্ষিণ আফ্রিকাও প্রস্তুত। আমাদের সহজে ছেড়ে দিবে না। আগের ম্যাচের মত পারফরম্যান্স বজায় থাকলে জয় পাওয়া সহজই হবে’।

তিনি আর বলেন, ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে হবে। বোলারদের উইকেট নিতে হবে এবং প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। চতুর্থ ম্যাচে করে দেখিয়েছে কোহলি, রায়না, রাহানে, হরভজন, ভুবেনশ্বর। পঞ্চম ম্যাচেও সবাই ভালো করবে এবং জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়বে। সিরিজ জয়ের জন্য আমরা লড়াইয়ে নামবো।’

সিরিজ জয়ের ভাবনাটা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের মনেও, ‘ভারত কতটা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তা তারা দেখিয়েছে। দু’বার সিরিজে পিছিয়ে পড়েও, এখনও লড়াইয়ে শক্তভাবে টিকে রয়েছে। আগের ম্যাচেই আমাদের জয় পাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা মোটেও ভালো করেনি। এমন ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মুখ্য ভূমিকা থাকা জরুরি। দু’জন বড় ইনিংস খেললেই ম্যাচ জয় সম্ভব হতো। তবে এসব নিয়ে এখন ভেবে কিছু পাওয়া যাবে না। আমাদের চিন্তায় পঞ্চম ম্যাচ। সিরিজ জয়ের জন্য যা করা দরকার সব করতে প্রস্তুত ছেলেরা। আগের ম্যাচের ভুলগুলো পরের ওয়ানডেতে আর করতে চায় না তারা।’

সর্বশেষ ২০১০ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলো ভারত। আর ওই তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ভারত। পাঁচ বা তিন ম্যাচের মোট ৯টি সিরিজে একে অপরের মুখোমুখি হয় দু’দল। সমান ৪টি করে সিরিজ জিতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আর একটি সিরিজ অমিমাংসিতভাবে শেষ হয়।

ভারত স্কোয়াড (সম্ভাব্য): রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, অজিঙ্কা রাহানে, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক), সুরেশ রায়না, আক্সার প্যাটেল, হরবজন সিং, অমিত মিশ্র, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহিত শর্মা/শ্রীনাথ অরবিন্দ।

দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াড (সম্ভাব্য): কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স (অধিনায়ক), ফারহান বিহারডাইন, ডেন এলগার/ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিচ, ডেল স্টেইন, মরনি মরকেল/অ্যারোন ফাঙ্গিসো, কাগিসো রাবাদা, ইমরান তাহির।



মন্তব্য চালু নেই